মিয়ানমারের উপদ্রুত রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের চার হাজারেরও বেশি লোক ম্রক উ-তে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য সমবেত হলে তখন এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আহতদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সুপ্রাচীন আরাকান রাজ্যের পতনের বার্ষিকী উদযাপনের পর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, এই বৌদ্ধরা তারই প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিলেন।
ম্রক উ ছিল প্রাচীন আরাকান রাজ্যের রাজধানী। সোয়া দুশো বছর আগে বর্মী সেনাবাহিনী সেই রাজ্য জয় করেছিল, আর রাখাইনের স্থানীয় মানুষজন এখনও প্রতি বছর সেই বিজয় স্মরণে অনুষ্ঠান করে থাকেন।
কিন্তু এ বছর কর্তৃপক্ষ সেই অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দিতে রাজি হযনি। তার প্রতিবাদেই বিরাট জনতা একটি সরকারি ভবন ঘিরে ফেললে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায় – হতাহত হন অনেক লোক।
স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে, পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেটই ছুঁড়েছিল। কিন্তু তারা জবাবে পাথর ও ইঁটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করলে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
জাতিগত সংঘাত
রাখাইন প্রদেশে যে বৃহত্তর জাতিগত সংঘাত চলছে, এই ঘটনার ফলে তার মোকাবিলা করা মিয়ানমারের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে বলছেন বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জোনাথন হেড।
রাখাইনের আর একটি জাতিগোষ্ঠী, মুসলিম রোহিঙ্গাদের সাড়ে ছয় লক্ষরও বেশি লোক গত বছর সামরিক দমনপীড়নের মুখে পালিয়ে গিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবারের এই সহিংসতা যখন ঘটল, সেই একই দিনে মিয়ানমারও ওই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি সময়সীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইনে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে চালানো হামলায় রাখাইনের অনেক বৌদ্ধও সামিল হয়েছিলেন। আমাদের সংবাদদাতা বলছেন, বৌদ্ধ নেতারা এখনও জেদ ধরে আছেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কিছুতেই ফিরতে দেওয়া হবে না।
রাখাইনের বৌদ্ধ বা আরাকানিদের ইতিহাস বঙ্গোপসাগরের তীরে আরাকান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের মতোই পুরনো, বর্মীদের হাতে ১৭৮৪ সালে যে সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল।
মিয়ানমারের (যে দেশটি বার্মা নামেও পরিচিত) জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশই বিভিন্ন সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর। এই সব গোষ্ঠীর অনেকগুলোর সঙ্গেই সরকারের সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে বা এখনও চলছে।
কয়েকটি জনগোষ্ঠী নিজেদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তুলেছে। এই সব বাহিনীর কোনও কোনওটির সঙ্গে সরকারি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে, তবে কয়েকটির সঙ্গে আবার যুদ্ধবিরতিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সূত্র, বিবিসি