সিরাজী এম আর মোস্তাকঃ বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শুধু বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। কয়েকজনের সাজাও হয়েছে। পৃথিবীর সবাই জেনেছে, বাংলাদেশ একটি যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে এদেশের নাগরিকরাই মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে। সুতরাং প্রশ্ন জেগেছে, যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র পাকিস্তান নাকি বাংলাদেশ? ১৯৭১ সালে কোন দেশ আক্রমণ করেছিল আর কোন দেশ স্বাধীন হয়েছিল? কারা বাংলাদেশে নারকীয় হত্যাকান্ড করেছিল? কারা ত্রিশ লাখ বাঙ্গালিকে শহীদ ও দুই লাখ নারীকে সম্ভ্রমহারা করেছিল? প্রায় এক কোটি বাঙ্গালি কেন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল? বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ লাখো বাঙ্গালিকে কারা অবরূদ্ধ রেখেছিল? পাকিস্তানিরা নাকি বাংলাদেশীরা? এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় কি? কারা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ও কারা যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম? এর উত্তরও স্পষ্ট। সম্প্রতি যাদের বিচার হয়েছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। অর্থাৎ, বাংলাদেশীরাই যুদ্ধাপরাধী। তারাই ত্রিশ লাখ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং দুই লাখ নারী ধর্ষণ করেছে। ঘাতক পাকিস্তানিরা ধোয়া তুলসি পাতা। তারা যুদ্ধাপরাধী নয়।
আসলে কি তাই? ১০ জানুয়ারী, ১৯৭২ তারিখে দেশে ফিরে লাখো জনতার সামনে বঙ্গপিতার ঘোষণা কি ছিল? তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিই মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘কবিগুরু দেখেন, আমরা এখন শুধু বাঙ্গালি নই, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন জাতি।’ এ ঘোষণার মূল্য কোথায়? সংগ্রাম ও বিসর্জনের মাধ্যমে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করেও আজ বাংলাদেশীরাই যুদ্ধাপরাধী। বিশ্ব দরবারে কেন এ লান্থণা? আমরা কি আত্মত্যাগী ও বীর জাতি নই? আমরা কি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করিনি? আমাদের শহীদরা কি প্রাণ হারায়নি? আমরা যুদ্ধাপরাধী জাতি কেন? এ লান্থণা কি কখনো ঘুচবে?
এজন্য উচিত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংশোধন করা। শুধু দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বা কোটা নয়; বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, জেনারেল ওসমানীসহ ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি যোদ্ধা ও শহীদ সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া। বাংলাদেশের ষোল কোটি নাগরিককে তাদের প্রজন্ম ঘোষণা করা। এতে বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানই হবে যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র।
এ্যাডভোকেট, ঢাকা।