Menu |||

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার

জাহাঙ্গীর হোসাইন চৌধুরী:: আমাদের বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম হচ্ছে মাদক জনিত সমস্যা। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মাদক মারাত্নক সমস্যার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের দেশের মূল সম্পদ হচ্ছে জনশক্তি, এই জনশক্তির ৮০ শতাংশই হচ্ছে তরুণ ও যুবসমাজ, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের তরুণ ও যুবসমাজের বড় একটা অংশ মাদক নামক মরণ নেশায় আক্রান্ত, ফলে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্হ হচ্ছে, মাদক ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ ভাবে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, আফিম, পেথিডিন নামক মাদকদ্রব্য। আর এসব মাদক আমাদের সমাজে ব্যপক হারে প্রসারিত করার লক্ষে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। আজ মাদক জনিত সমস্যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।

আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজ নিজ অবস্হান থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মাদকাসক্তি শুধুমাত্র আসক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা নয় এটা সামাজিক সমস্যা, আমাদের জাতীয় সমস্যা। কারণ একজন আসক্ত ব্যক্তি শুধু মাত্র নিজেই শারিরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয়না সে তার পরিরারকেও ক্ষতিগ্রস্হ করে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে, ক্ষতিগ্রস্হ হয় সমাজ। একটি পরিবারে যদি একজন মাদকাসক্ত থাকে তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যও আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি ভাবে বন্দুমহল, পাড়া প্রতিবেশি তরুণ ও যুবকরাও ঐ আসক্ত ব্যক্তির প্ররোচনায় বা মাদকের প্রতি কৌতুহলী হয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে। মাদকাসক্তি জনিত সমস্যা সমাজে কতটুকু ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে তা প্রতিদিনকার খবরের কাগজ পড়লেই বুঝা যায়। বাংলাদেশের শহর জনপদে গ্রামে গঞ্জে যতো চুরি ছিনতাই খুন রাহাজানি হচ্ছে তার অধিকাংশের মূলে মাদক। কেউ নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য আবার কেউ মাদকাসক্ত হয়ে এসব অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলুতেও মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের শিক্ষা জীবন হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত, জাতি হারাচ্ছে মেধা।

এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমাদেরকে মাদক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মাদক জনিত সমস্যা দুইটা দিক বিদ্যমান এক হচ্ছে মাদকের সরবরাহ অন্যটি হচ্ছে মাদকের চাহিদা। মাদক সরবরাহ বন্ধে আমাদের আইনসৃংখলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। মাদক সরবরাহকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্হা করতে হবে। আমাদের সীমানা গুলোতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের সীমানা প্রহরীদের, যাতে আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ করতে না পারে। আমাদের সোনার দেশ যাতে মাদক পাচারকারীদের স্বর্গভূমি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে, আইনসৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীক ও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধে। মাদক ব্যবসা আমাদের দেশে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে কারন মাদকের চাহিদা খুব বেশি, তাই মাদক পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে আমাদের দেশ। আমরা যাতে মাদকের চাহিদা শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন মাদকবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা, মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষকে সচেতন করতে হবে, যাতে আর নতুন করে কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও প্রিয়জন মাদক নামক মরণ নেশায় আক্রান্ত হয়ে নিজের সুন্দর জীবনকে যেনো তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়। ইতিমধ্যে যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন তাদেরকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে, কারণ একজন আসক্ত ব্যক্তি খারাপ নয় পাগল নয় তবে অসুস্হ। আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত মাদকাসক্তরা কখনো সুস্হ হতে পারেনা, এমনটি ধারনা আসলে সঠিক নয়।

এই ভূল ধারণার ফলে আসক্ত ব্যক্তির পরিবার তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন, এতে ঐ আসক্ত ব্যক্তির মাদক জনিত সমস্যা তিব্র থেকে আরো তিব্রতর হয়ে ওঠে। বাস্তবতা হলো সঠিক চিকিৎসায় মাদকাসক্তরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে তাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবে চালিয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্তি এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ, মাদকাসক্তির ফলে কেন্দ্রিয় স্নায়ূতন্ত্র মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় ফলে মন-মেজাজের পরিবর্তন ঘটে , ইন্দ্রিয় অনুভূতি লোভ পায়, আচার-আচরনের পরিবর্তন ঘটে, চিন্তা শক্তির পরিবর্তন ও বিচারিক ক্ষমতা লোভ পায়, তৈরী হয় মানসিক ও শারিরিক নির্ভরশীলতা, ফলে ঐ আসক্ত ব্যক্তি চাইলেও মাদকমুক্ত থাকতে পারেনা, শারিরিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্হ হয়, যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, ফুসফুসে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, রক্ত শূন্যতা, জন্ডিস, ক্যান্সার, যক্ষ, যৌন অপারগতা, কিডনিতে সমস্যা, ইন্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহনে এইডস, হেপাটাইটিস-এ ও হেপাটাইটিস-বি এর মতো মারাত্নক রোগ হতে পারে। দীর্ঘস্হায়ী রোগ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ যেমন নির্মূল করা যায় না কিন্তু নিয়ন্ত্রন করা যায়, রোগীকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়।

মাদকাসক্তি জনিত মস্তিষ্কের রোগটিও অনুরূপ নির্মূল করা যায় না কিন্তু নিয়ন্ত্রন করা যায়। সঠিক চিকিৎসা করলে ও নিয়ম কানুন মেনে চললে মাদকাসক্তি জনিত মস্তিষ্কের রোগটি নিয়ন্ত্রনে রেখে অজীবন সুস্হ থাকা সম্ভব। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অপরাধী নয়, মাদকাসক্তি একটি রোগ, মাদকাসক্ত একজন রোগী। তাদেরকে অপরাধী ভাবা একেবারেই উচিৎ হবেনা। মাদকাসক্তদের প্রতি ঘৃনা বা অবহেলা নয় তাদেরকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের মাধ্যমে সুস্হ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে মাদক আমাদের জন্য একটি জাতীয় সমস্যা যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কিশোর কিশোরী, তরুন তরুনী, যুবক যুবতী, মধ্যবয়সী নারী পুরুষ কেউই মাদক নামক মরন নেশার হাত থেকে নিরাপদ নয়। মাদক জনিত সমস্যা থেকে বাচঁতে হলে গনসচেতনতার বিকল্প নেই। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত ভাবে আসে, এটি ক্রমান্নয়ে বাড়ে, এবং জীবন ধ্বংসী। মাদক জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়, তাই আসুন আমরা মাদককে না বলি জীবনকে হ্যা বলি।

লেখক : মাদকবিরোধী সংগঠক ও সমাজকর্মী।

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী
কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে
সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে
মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার
কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
নতুন উপদেষ্টাদের নিয়ে জনগণের পক্ষ থেকে অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখবো’
জীবিত স্বামীকে গণ–অভ্যুত্থানে ‘মৃত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়: সম্পাদক পরিষদ
দেশে ঢালাও মামলার প্রবণতা বিব্রতকর: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো উচিত হয়নি: রিজভী

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার

জাহাঙ্গীর হোসাইন চৌধুরী:: আমাদের বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম হচ্ছে মাদক জনিত সমস্যা। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মাদক মারাত্নক সমস্যার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের দেশের মূল সম্পদ হচ্ছে জনশক্তি, এই জনশক্তির ৮০ শতাংশই হচ্ছে তরুণ ও যুবসমাজ, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের তরুণ ও যুবসমাজের বড় একটা অংশ মাদক নামক মরণ নেশায় আক্রান্ত, ফলে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্হ হচ্ছে, মাদক ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ ভাবে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, আফিম, পেথিডিন নামক মাদকদ্রব্য। আর এসব মাদক আমাদের সমাজে ব্যপক হারে প্রসারিত করার লক্ষে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। আজ মাদক জনিত সমস্যা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।

আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজ নিজ অবস্হান থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মাদকাসক্তি শুধুমাত্র আসক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা নয় এটা সামাজিক সমস্যা, আমাদের জাতীয় সমস্যা। কারণ একজন আসক্ত ব্যক্তি শুধু মাত্র নিজেই শারিরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয়না সে তার পরিরারকেও ক্ষতিগ্রস্হ করে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে, ক্ষতিগ্রস্হ হয় সমাজ। একটি পরিবারে যদি একজন মাদকাসক্ত থাকে তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যও আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি ভাবে বন্দুমহল, পাড়া প্রতিবেশি তরুণ ও যুবকরাও ঐ আসক্ত ব্যক্তির প্ররোচনায় বা মাদকের প্রতি কৌতুহলী হয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে। মাদকাসক্তি জনিত সমস্যা সমাজে কতটুকু ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে তা প্রতিদিনকার খবরের কাগজ পড়লেই বুঝা যায়। বাংলাদেশের শহর জনপদে গ্রামে গঞ্জে যতো চুরি ছিনতাই খুন রাহাজানি হচ্ছে তার অধিকাংশের মূলে মাদক। কেউ নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য আবার কেউ মাদকাসক্ত হয়ে এসব অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলুতেও মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের শিক্ষা জীবন হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত, জাতি হারাচ্ছে মেধা।

এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাড়াবো তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমাদেরকে মাদক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মাদক জনিত সমস্যা দুইটা দিক বিদ্যমান এক হচ্ছে মাদকের সরবরাহ অন্যটি হচ্ছে মাদকের চাহিদা। মাদক সরবরাহ বন্ধে আমাদের আইনসৃংখলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। মাদক সরবরাহকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্হা করতে হবে। আমাদের সীমানা গুলোতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের সীমানা প্রহরীদের, যাতে আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ করতে না পারে। আমাদের সোনার দেশ যাতে মাদক পাচারকারীদের স্বর্গভূমি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে, আইনসৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীক ও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে মাদক সন্ত্রাস প্রতিরোধে। মাদক ব্যবসা আমাদের দেশে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে কারন মাদকের চাহিদা খুব বেশি, তাই মাদক পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে আমাদের দেশ। আমরা যাতে মাদকের চাহিদা শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন মাদকবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা, মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষকে সচেতন করতে হবে, যাতে আর নতুন করে কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও প্রিয়জন মাদক নামক মরণ নেশায় আক্রান্ত হয়ে নিজের সুন্দর জীবনকে যেনো তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়। ইতিমধ্যে যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন তাদেরকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে, কারণ একজন আসক্ত ব্যক্তি খারাপ নয় পাগল নয় তবে অসুস্হ। আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত মাদকাসক্তরা কখনো সুস্হ হতে পারেনা, এমনটি ধারনা আসলে সঠিক নয়।

এই ভূল ধারণার ফলে আসক্ত ব্যক্তির পরিবার তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন, এতে ঐ আসক্ত ব্যক্তির মাদক জনিত সমস্যা তিব্র থেকে আরো তিব্রতর হয়ে ওঠে। বাস্তবতা হলো সঠিক চিকিৎসায় মাদকাসক্তরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে তাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবে চালিয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্তি এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ, মাদকাসক্তির ফলে কেন্দ্রিয় স্নায়ূতন্ত্র মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় ফলে মন-মেজাজের পরিবর্তন ঘটে , ইন্দ্রিয় অনুভূতি লোভ পায়, আচার-আচরনের পরিবর্তন ঘটে, চিন্তা শক্তির পরিবর্তন ও বিচারিক ক্ষমতা লোভ পায়, তৈরী হয় মানসিক ও শারিরিক নির্ভরশীলতা, ফলে ঐ আসক্ত ব্যক্তি চাইলেও মাদকমুক্ত থাকতে পারেনা, শারিরিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্হ হয়, যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, ফুসফুসে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, রক্ত শূন্যতা, জন্ডিস, ক্যান্সার, যক্ষ, যৌন অপারগতা, কিডনিতে সমস্যা, ইন্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহনে এইডস, হেপাটাইটিস-এ ও হেপাটাইটিস-বি এর মতো মারাত্নক রোগ হতে পারে। দীর্ঘস্হায়ী রোগ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ যেমন নির্মূল করা যায় না কিন্তু নিয়ন্ত্রন করা যায়, রোগীকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়।

মাদকাসক্তি জনিত মস্তিষ্কের রোগটিও অনুরূপ নির্মূল করা যায় না কিন্তু নিয়ন্ত্রন করা যায়। সঠিক চিকিৎসা করলে ও নিয়ম কানুন মেনে চললে মাদকাসক্তি জনিত মস্তিষ্কের রোগটি নিয়ন্ত্রনে রেখে অজীবন সুস্হ থাকা সম্ভব। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অপরাধী নয়, মাদকাসক্তি একটি রোগ, মাদকাসক্ত একজন রোগী। তাদেরকে অপরাধী ভাবা একেবারেই উচিৎ হবেনা। মাদকাসক্তদের প্রতি ঘৃনা বা অবহেলা নয় তাদেরকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে সঠিক চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের মাধ্যমে সুস্হ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে মাদক আমাদের জন্য একটি জাতীয় সমস্যা যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কিশোর কিশোরী, তরুন তরুনী, যুবক যুবতী, মধ্যবয়সী নারী পুরুষ কেউই মাদক নামক মরন নেশার হাত থেকে নিরাপদ নয়। মাদক জনিত সমস্যা থেকে বাচঁতে হলে গনসচেতনতার বিকল্প নেই। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত ভাবে আসে, এটি ক্রমান্নয়ে বাড়ে, এবং জীবন ধ্বংসী। মাদক জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়, তাই আসুন আমরা মাদককে না বলি জীবনকে হ্যা বলি।

লেখক : মাদকবিরোধী সংগঠক ও সমাজকর্মী।

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী
কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে
সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে
মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার
কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
নতুন উপদেষ্টাদের নিয়ে জনগণের পক্ষ থেকে অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখবো’
জীবিত স্বামীকে গণ–অভ্যুত্থানে ‘মৃত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়: সম্পাদক পরিষদ
দেশে ঢালাও মামলার প্রবণতা বিব্রতকর: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো উচিত হয়নি: রিজভী


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।