ঢাকা: যারা সম্পদের লোভে হানাহানিসহ অন্যায় কাজে লিপ্ত তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবনে ধন সম্পদ কিছুই নয়। মরে গেলে সব ফেলে রেখে যেতে হয়।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের জন্য মানুষ অনেকে মারামারি কাটাকাটি করে ফেলে। কিন্তু যখন মরে যায় তখন কোথায় যায়? এ সম্পদ কোথায় থাকে? কী কাজে লাগে? কোনো কাজে লাগে না।
“কাজেই তার জন্য অসৎ পথে কেন আমরা যাবো? কেন মারামারি-কাটাকাটি করবো। বরং যা আছে সব দিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবো সেখানেই যত আনন্দ।”
জাতির জনকের কন্যা বলেন, বাবা-মাকে দেখেছি দেশের জন্য, মানুষের জন্য সব কিছু বিলিয়ে যেতে।
“ক্ষমতা শুধু ভোগ করার বস্তু নয়। ক্ষমতা মানে দায়িত্ব, আর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। সে দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের প্রতি দায়িত্ব।”
প্রধানমন্ত্রী শহীদদের রক্তের শপথ নিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
৭৫ এর যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তাদের মধ্যে মানবকল্যাণের চিন্তা ছিলো না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা চেয়েছিলো এদেশের ক্ষুধার্ত, কঙ্কালসার মানুষের দেহ দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনবে আর নিজেরা লুটেপুটে খাবে।
“যারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে, ত্যাগ করে তারা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে সে দেশের উন্নতি হবে না। তার প্রমাণ মানুষ ৭৫ সালের পর ২১ বছরে পেয়েছে, ২০০১ সালের পর ৭ বছর পেয়েছে।”
স্বাধীনতাবিরোধীদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ দেশকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিলো তারা যে ভুল সেটা প্রমাণ করতে হবে। সেটা আমরা কিছুটা হলেও প্রমাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন সময় নিজের জীবন বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রাণ দেওয়ার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অগণিত নেতাকর্মী পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে। কখনো ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি।
“একটা পর একটা হামলা হয়েছে। আমাকে রক্ষা করেছে দলের নেতাকর্মীরাইতো। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। আমাকে রক্ষা করে গেছেন।”
দলের আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও তারা দিনের পর দিন সংগ্রাম করে গেছেন। অনেক অত্যাচার জেল-জুলুম তাদের সইতে হয়েছিলো। আর্দশচ্যুত হননি।
“প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অনেকে কথা বলেছেন। অনেককে অপমানিত হতে হয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সবাই বিকিয়ে যায়নি, সবাই বিকিয়ে যায় না, সবাই বিকিয়ে যেতে পারে না। তাই যদি যেতে আজকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারতো না।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর, শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের সঙ্গে আপোস না করার আহ্বান জানিয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, অর্থ, যোগাযোগ সব কিছু স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে। এসবের বিনিময়ে একটা নিয়োগ যখন হয়ে যায়…আপনাদের ছোট ছোট আপোসে শহীদ পরিবারের সন্তানদের বুকে সুনামি হয়ে যায়।
এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।