জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা: “ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, অসাধ্য সাধান হয়; ভালবাসায় আর অধ্যবসায়” প্রবীণদের চির সত্য এই কথা গুলোর প্রমাণ দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আরব আমিরাত প্রবাসী নুর হোসেন। রাজধানী আবুধাবী থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পশ্চিম জোনে মরুভূমির উপতপ্ত বালি দিয়ে কৃত্রিম পুকুর বানিয়ে সম্পুর্ণ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করেছেন মাছের চাষ। তার এমন মাছের খামার দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় আরবীসহ দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ ভীড় করছেন। তার এই খামারে কাজ করে বেশ খুশি দেশীয় শ্রমিকেরা। এত কিছুর মাঝেও খুশি নেই খোদ নুর হোসেন। তার খামারের উপার্জিত আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাহিরে। তার খামারের জন্য দেশ থেকে মাছের পোনা নিতে না পারায় এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশ থেকে পোনা এনে মাছের চাষ করায় লাভের মূখ দেখছেন এই খামারি। দেশ থেকে সহজ ভাবে যদি মাছের পোনা আনতে না পারায় তার খামারে অর্জিত রেমিটেন্স চলে যাচ্ছে দেশের বাহিরে। একদিকে মরুভূমির বালির গরম অন্যদিকে ৫০ ডিগ্রীর অধিক তাপমাত্রার মাঝে যেখানে মরুঅঞ্চলের প্রাণি থাকতে রীতিমত কল্পনীয় সেখানে মাছের চাষ তো একেবারেই অসাধ্য। আরব বদ্বীপ বেষ্টিত আরব সাগরে নুনা পানির সয়লাব সেখানে মিষ্টি পানিয় পাওয়া তো দুর্লভের মাঝে এমন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নুর হোসেন শুরু করেছেন এই নানা প্রজাতির মাছের চাষ। মরুর বুকে এমন মাছের চাষ দেখতে স্থানীয় আরবীয় সহ প্রতিদিন অনেক মানুষ ভীড় করেন। হামেদ নামের একজন আরবী এই প্রতিবেদকে জানান, “আরবের মরু অঞ্চলে আমি এই প্রথম এমন মাছের চাষ দেখিছি , যা দেখি আমি কি যে খুষি হলাম ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি অনেক অনেক খুশি। আমি আমার ন্ধুদের বলবো তারাও যেন এই খামার দেখতে আসেন। তিনি আমাদের মরু অঞ্চলের জন্য একটি আদর্শ। যাকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়। এই খামারী প্রমাণ করেছেন মানুষের অসাধ্য বলতে কিছু নেই। যতœ আর ভালবাসা দিয়ে মরুভূমিতে ফুল ফোটানো যায়। তার প্রমাণ এই নুর হোসেন”। শুকুর মিয়া নামে একজন বাংলাদেশী প্রবাসী ব্যবয়ায়ী বলেন, “আমি ২০ বছরের অধিক সময় ধরে আরবের এই মরুদেশটিতে বসবাস করে আসছি কিন্তু এমন খামার কোথাও দেখিনাই। মরুভূমিতে মাছের চাষ করা তো দূরের কথা কল্পনা করাও রিতিমত দুর্সাধ্য। এটি একটি শুধু বাণিজ্যিক মাছের খামার বললে ভুল হবে। এটি একটি পর্যটন জোনে পরিনত হয়েছে। এই খামার সকল বাংলাদেশিকে অনুপ্রণিত করবে। খামারে কাজে নিয়োজিত দেশীয় শ্রমিকেরা এই প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ আর এই মাছের চাষ ও একটি কৃষির অংশ। এই খামারে কাজ করে মনে হচ্ছে একটি পর্যটন এলাকায় কাজ করছি। প্রতিদিন নানা রকম মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হচ্ছে এই খামারে চাকরী করার সুবাধে। মাছের খামারে কাজ করতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি আমরা। তবে এত কিছুর মাঝেও খুশি নন খোদ খামারী। দেশ থেকে কিছু মাছের পোনা আনতে চাইলে তাকে নানা প্রকার ঝামেলা পোহাতে হয়। বিমান বন্দর থেকে মৎস ভবন পর্যন্ত দৌড়-ঝাঁপ দিয়ে কোন সুরহা করতে না পারায় আবুধাবীর লেওয়া মাজিরার আল-শামকা ফিশ ফার্ম’র পরিচালক নুর হোসেন এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালী। আর প্রবাসে এসে মাছ ছাড়া কি থাকা যায়? তাই প্রাথমিক ভাবে আমি যে খামে চাকরী করতাম এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে ২ টা মাটির কৃত্রিম পুকুর বানিয়ে মাছের চাষ শুরু করি। আমার এই উদ্যোগ দেখে আমার স্পন্সর খুশি হয়ে আমাকে জায়গা লিজ দেন। পরে আমি বাণিজ্যিকভাবে মাছে চাষ শুরু করি। দিন দিন আমার ভাড়তে থাকে প্রজেক্টের আকার। তাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে নানা জাতের মাছের পোনা। আমাদের দেশে মিষ্টি পানির সকল প্রকার মাছের পোনা থাকলেও আনতে দিচ্ছেন বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ আমাকে বললেন, এইগুলো নেয়ার অনুমতি নাই। তাই আমি সকল প্রকার মন্ত্রাণালয় যোগাযোগ করেছি, এমনকি মৎস ভবন গিয়েও কোন সুরহা করতে পারি নাই। আমার খামারে যে সব পোনার প্রয়োজন তা দেশ থেকে আনলে অনেক সহজ মূল্যে পাওয়া যেত, কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য দেশ ও আমেরিকা, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সংগ্রহ করতে মোটা অংকের একটা রেমিটেন্স হাতছাড়া হচ্ছে। যে রেমিটেন্স দেশে যেতো সেটা এখন চলে যাচ্ছে অন্যান্য দেশে। আরবীয় লোকেরা সাহয্য করে কিন্তু দেশে ঘাটে ঘাটে বাঁধা। এক প্রশ্নের উত্তরে নুর হোসেন বলেন, আমাদের দেশে যে মাছে ১ বছর লাগে বিক্রি করতে এখানে তা ৬ -৭ মাসে বিক্রি করা যায়। বাণিজ্যিক ভাবে এখনো পুরাপুরি সফলতা পাচ্ছেন না। “মিঠার লাভ পিপঁড়ায় খাচ্ছে” বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাকে অনুসরণ করে তার খামারের আশ-পাশ আরো কয়েক জিন বাংলাদেশী প্রবাসী এমন মাছের খামার গড়ে তুলেছেন। তার স্কলে যেন দেশ থেকে সহজ ভাবে মাছের পোনা রপ্তানী করে প্রতি বছর আয় করা যাবে।