অগ্রদৃষ্টি-ডেস্ক: চলমান সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেড় কোটি শিশু এখন শিক্ষাবঞ্চিত। এই বিপুল সংখ্যক শিশুকে যদি ক্লাসরুমে ফেরানো না যায়, তাহলে পুরো একটা প্রজন্ম নিরক্ষরতার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানায়, সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ ও অঞ্চলে ৮ হাজার ৮৫০টি স্কুল হয় বিধ্বস্ত হয়েছে, অথবা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কিংবা সংঘাতে থাকা গোষ্ঠীগুলোর ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। ফলে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউনিসেফ আরও জানায়, অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এরই মধ্যে হতাহত হয়েছেন। ক্লাসরুমগুলো এখন শিক্ষাদানের পরিবর্তে বোমা তৈরির আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সেই সঙ্গে সংঘাতে থাকা গোষ্ঠীগুলো শিশুদেরকে লড়াইয়ে ব্যবহার করছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় শিশু সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক পিটার সালামা বলেছেন, সংঘাতের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়েছে শিশুদের ওপর। শুধু স্কুলগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, শিশুদের ভবিষ্যতও হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের স্বপ্ন সংঘাতের আঁধারে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
গত বছর সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, সুদান ও ইয়েমেনে শুধুমাত্র স্কুলগুলোতেই ২১৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ইউনিসেফ জানায়, সিরিয়ায় সাড়ে চার বছর ধরে চলমান সংঘাতে দেশটির শিক্ষাখাতকেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রতি চার স্কুলের একটি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ লাখ শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর শিক্ষা বন্ধ হওয়ার হুমকিতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ৫২ হাজারেরও বেশি শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে সিরিয়ার শিক্ষায় এক অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটেছে। এসব শিক্ষকের মধ্যে যারা অন্যদেশে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছেন, সেখানেও তারা বাধার মুখে পড়ছেন।
গাজা উপত্যকায় গত বছর ফিলিস্তিনি হামাস ও ইসরায়েল বাহিনীর মধ্যে ৫০ দিনের এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে ২ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি ও ৭৩ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। এছাড়া অন্তত ২৮১টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সরকারি বাহিনী ও শিয়া মিলিশিয়াদের সঙ্গে চলমান সংঘাতে প্রায় দশ লাখ শিশুর শিক্ষাগ্রহণ হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে এক হাজার দুইশ স্কুল এখন আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতি ক্লাসরুমে গড়ে নয়টি করে পরিবার বসবাস করছে।
সংঘাতে লিবিয়ার শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১১ সালে মোম্মায়ার গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যূতির পর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতে যেসকল পরিবার ঘড়বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের সন্তানদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইউনিসেফ বলছে, লিবিয়ার শুধু বেনগাজি শহরেই ২৩৯টি স্কুলের মধ্যে ১৭৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র ৬৫টিতে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, তবে এগুলোও হুমকির মধ্যে রয়েছে।
সুদানেও বিপুল সংখ্যক পরিবার ঘড়বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব পরিবারের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় দেড় কোটি শিশুর শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, একটা প্রজন্ম অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে।