অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভিআইপি সড়কটিকে উন্নত বিশ্বের সড়কপথের আদলে সাজানো হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সড়কটি উন্নত বিশ্বকেও ছাড়িয়ে যাবে।
আর মাত্র তিনমাস পর দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক হতে যাচ্ছে এটি। আগামী বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটালাইজড সড়কটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) তত্ত্বাবধানে চলছে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক সড়কে রূপান্তরের এ কাজ। তবে পুরো কাজের জন্য সরকারের কোনো ব্যয় হচ্ছে না। নিজস্ব অর্থায়নে ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এটি করে দিচ্ছে।
সড়কটির মূল আকর্ষণ হবে এর দুই পাশের দৃশ্যাবলী। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভাষা ও স্বাধীনতার আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাপ্রবাহ ফুটে উঠবে তিনটি স্মৃতিস্তম্ভে। বাংলাদেশের বীরত্বগাথার স্মৃতিস্মরুপ স্মৃতিস্তম্ভগুলো তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।
এরই মধ্যে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জ্বলে উঠেছে ব্যতিক্রমী এলইডি লাইটও। ঢাকায় সড়কপথে সাদা আলোর এমন ঝলক খুব বেশিদিন আগের নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রথম এলইডি লাইট ব্যবহার শুরু করে। এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও এলইডি লাইটে আসছে।
পুরো সড়কপথের দুই পাশে মনোরম ওয়াকওয়ে হচ্ছে। ঝোপ-ঝাড় আর জঙ্গল কেটে ইতোমধ্যেই পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে রাস্তার দুই পাশ।
এক সময় এসব ঝোপ-ঝাড়ে অপরাধী ও মাদকাসক্তদের আখড়া ছিলো। যৌনকর্মীদের বিচরণসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হতো এ সড়কে। আর অন্ধকারে এটি ছিনতাই হাইজাক স্পট হিসেবে পরিচিত ছিলো। এখন সে অবস্থা আর নেই।
রাস্তার এ সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের প্রধান আবেদ মনসুর বাংলানিউজকে জানান, জঙ্গল এখন আর নেই। এটি পার্কের মতো দেখাবে। সন্ধ্যার পরে এক সময় যে রাস্তার পাশে হাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো, এখন সেটি হবে শোভাময়।
পথচারীরা যেমন পাঁচ তারকা সুবিধার টয়লেট-ওয়াশরুম ব্যবহার করতে পারবেন, তেমনি ভিআইপি গাড়ি থামিয়েও কেউ একই ওয়াশরুম-টয়লেট সুবিধা ব্যবহার করবেন স্বচ্ছন্দে।
তিনি আরও জানান, চীন থেকে দু’টি কারিগরি প্রতিনিধি দল এসে রাস্তার এলইডি লাইটের ফোকাস ঠিক করে দিয়ে যাবেন। এটি করা হলে লাইটের আলো আরও বাড়বে। এ আলোয় রাস্তার আশেপাশের অংশও পরিষ্কার দেখা যাবে।
রাস্তার বনানী অংশে হেঁটে দেখা গেছে, সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে জ্বলে উঠছে এলইডি লাইট। দুই পাশে সাদা আর রঙ্নি আলোয় হাঁটা-চলায় অনেক মানুষের ভিড় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে মার্চের পর রাস্তাটি হচ্ছে ঢাকার প্রথম কোনো সড়ক, যেখানে ফ্রি ওয়াইফাই ছাড়াও সাইকেল লেন থাকছে।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ জানায়, পুরো সড়কপথে উন্মুক্ত থাকবে ওয়াইফাই। প্রতি ১০ মিনিট পর পর ওয়াইফাই লগ আউট হয়ে যাবে। লগইন করতে হলে ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন দেখতে হবে। এ পদ্ধতির সড়ক ও ওয়াইফাই সেবা ভারতের ব্যাঙ্গালুরু ও চীনের গোয়াংজুতে আছে।
পুরো সড়কটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত হয়ে যাবে। ওয়াকিটকি হাতে দিন-রাত সড়ক পাহারায় থাকবেন প্রশিক্ষিত লোকবল। কেউ দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে পারবেন না।
১০টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনিও বসানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে হোটেল ৠাডিসনের সামনের রাস্তার দু’পাশে দু’টি, শ্যাওড়ায় দু’টি, খিলক্ষেতে দু’টি, বিমানবন্দরের আগে কাউলায় দু’টি এবং বিমানবন্দর মোড়ে হচ্ছে দু’টি ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি। সেগুলোতে ওয়াইফাই, এটিএম, মোবাইল রিচার্জ, ওয়াশরুম এবং কয়েন দিয়ে পণ্য কেনার অত্যাধুনিক সুবিধা পাবেন যাত্রী ও পথচারীরা।
একেকটি যাত্রী ছাউনি হবে আড়াইশ’ ফুট দৈর্ঘ্যের। যেখানে একশ’ থেকে দেড়শ’ জন বসতে পারবেন।
১২টি মাউন্টেন ঝরনাও বসবে ছয় কিলোমিটার সড়কের মধ্যে।
নিকুঞ্জ এলাকায় এ প্রকল্পের অর্থায়নেই হচ্ছে কিডস প্লেয়িং জোন। আর নিকুঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার একপাশে সাইকেল লেন ব্যবহার করতে পারবেন সাইক্লিস্টরা।