জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আড়াই বছর পূর্বে পৌর
সদরের রাঙ্গুনিয়া পুলিশ ষ্টেশনের কাছাকাছি স্থানে ফায়ার ষ্টেশনের স্থাপনের
কারনে আনুমানিক প্রায় ৮ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে।
অন্যদিকে পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারনে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রনে
ফায়ার সার্ভিস কর্র্মীদের বেগ পেতে হয়। আগুনে পুড়েছে এ পর্যন্ত ৫
কোটি টাকার সম্পদ। সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গুনিয়ায় আগুনের প্রবণতা
বেড়ে যাওয়ায় লোকবল কম হওয়ায় ফায়ার ষ্টেশনের কর্মীরা আগুনে নেভাতে
হিমশিম খাচ্ছে ।
সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত সম্পদ ভিত্তিক
অগ্নিকান্ডে ক্ষতি বাসগৃহ নষ্ট হয়েছে ৮৪ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার সম্পদ, খড়ের
গাদা বাবদ অগ্নিকান্ডে প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকা, ব্যবসা প্রতিষ্টান ও দোকান
ঘর প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা, গাড়ি পোড়া হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ টাকা, কারখানা
ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকাসহ অন্যান্য মিলে আনুমানিক ৫ কোটি
টাকার সম্পদ পুড়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের ক্ষতির বিপরীতে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার
সার্ভিস ষ্টেশন দক্ষতার সাথে দ্রƒত ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনে এনে
বাস গৃহ উদ্ধার করেছে শতাধিক ঘর ,যার অনুমানিক সম্পদের মূল্য প্রায় ২
কোটি ১৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, খড়ের গাদা রক্ষা করেছে ৩ লক্ষ ১৮ হাজার
টাকা, দোকান ঘর রক্ষা করেছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার সম্পদ, গাড়ি পোড়া
রক্ষা করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ও কারখানা অগ্নিকান্ড থেকে রক্ষা পেয়েছে ৮৩ লক্ষ
টাকার মোট সম্পদসহ আনুমানিক ৭ কোটি ২৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকার সম্পদ।
পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অগ্নি নির্বাপনের মতো কঠিন কাজটি করে
যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ২য় শ্রেণীর ফায়ার
ষ্টেশনে ১৬ জন ফায়ার ফাইটার থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৬ জন ফায়ার ফাইটার
দিয়ে পুরো রাঙ্গুনিয়ার অগ্ন্ধিসঢ়; নির্বাপন ও বিভিন্ন দূর্যোগ-দূর্ঘটনা জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালালেও আরো জনবল নিয়োগ জরুরী হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গত এক মাসে রাঙ্গুনিয়ায় ৫ স্থানে
বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের হিসাবে প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি বলে জানা গেছে। গত
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪ পৃথক স্থানে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭
কোটি টাকা। সব হারিয়ে পথে বসেছে প্রায় শতাধিক পরিবারের ছোট-
বড় ৫’শ জনসাধারণ। উপজেলার কাপ্তাই সড়কের মরিয়ম নগর চৌমুহনী
এলাকায় অগ্ন্ধিসঢ়;কান্ডে ১৭ এপ্রিল ৮ দোকান পুড়ে গেছে। এতে
আনুমানিক ১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরাজানিয়েছে।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার ষ্টেশন সুত্রে জানা যায়। ১৯ এপ্রিল রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার গাজী রশিদিয়া পাড়া ৯ নং ওয়ার্ডে দিনগত রাত ১১টা ৪০
মিনিটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়।
আগুনে আনুমানিক দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা
জানিয়েছে।
পরদিন ২০ এপ্রিল দুপুর ১২টায় চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের চারা বটতল এলাকায় অগ্নিকান্ডে ৯ ঘর পুড়ে যায় রাঙ্গুনিয়া ও
কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন
নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এতে অনুমানিক ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হয়। ২৫ এপ্রিল রাঙ্গুনিয়া থানা সদরের সৈয়দ গাজী মার্কেটের তিন
দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পূজার মোমবাতির আগুন থেকে
অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন । ঘটনাস্থলের ২শ
গজের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছানোর
কারণে বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় দোকান। এতেও প্রায় ৪০
হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙ্গুনিয়া ফায়ার ষ্টেশনের ইনচার্জ নারায়ন চক্রবর্তী জানান, স্বল্প জনবল
নিয়ে ফায়ার ষ্টেশনের কর্মীরা রাতদিন জনজীবনের সেবায় নিয়োজিত
রয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা উর্ধত্বন
কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অচিরেই এ সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে তিনি
জানান। তিনি আরো বলেন, শুধু অগ্নি নির্বাপনে নয় বিভিন্ন্ধসঢ়;
দূর্যোগ-দূর্ঘটনা, পানির ডুবুরির কাজও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা করে
থাকে। কিন্তু জনবল অপ্রতুলতার কারনে ভয়াবহ ও একই সময়ে একাধিক
অগ্ন্ধিসঢ়;কান্ডে আগুন নির্বাপনে হিমশিমে পড়তে হয়। অনেক সময়
অগ্নিকান্ড এলাকায় রাস্তা সংকুচিত থাকায় বড় গাড়ী নিয়ে যাওয়া
যায়না। অনেক সময় দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় পানির উৎস ডোবা বা পুকুর
না থাকার কারনে অগ্নি নির্বাপন সম্ভব হয়না। অধিকাংশ সময় বৈদ্যুতিক
সর্ট সার্কিট থেকে অগ্ন্ধিসঢ়;কান্ডের ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের
২৭ জুলাই সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি ফায়ার
ষ্টেশন উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।