অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের ত্রুটি নিয়ে সমালোচনার রেশ না কাটতেই এবার ঢাকা থেকে ইয়াঙ্গুনগামী একটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছে। ওই প্লেনের এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একঘণ্টা উড়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে আসতে হয়েছে ফ্লাইটটিকে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় শাহজালাল থেকে উড়াল দেওয়া বিজি-০৬০ ফ্লাইটটি এ ত্রুটির কবলে পড়ে। ড্যাশ ৮ এয়ারক্র্যাফটিতে ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে বেশ ক’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আধঘণ্টা ওড়ার পর বাধ্য হয়ে শাহজালালে ফেরার পথে ওই যাত্রীদের জরুরি অক্সিজেন মাস্ক পরাতে হয়।
প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরিগামী ওই ফ্লাইটের ত্রুটির পর ইয়াঙ্গুনগামী এই ফ্লাইটও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ায় বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে বলে বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নিয়মিত যাত্রীরাও। এতে রাষ্ট্রীয় এ এয়ারলাইন্সের যাত্রীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনগামী ফ্লাইটের ত্রুটির তথ্য জানিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান বলেন, দুপুর দেড়টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ফ্লাইটটি। আধঘণ্টা ওড়ার পর প্লেনের কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যায়। এতে ফের আধঘণ্টা উড়েই ঢাকায় ফিরতে হয়। সন্ধ্যার দিকে ওই ত্রুটি মেরামতের পর ফ্লাইটটি আবার ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, ফ্লাইটটি শাহজালাল থেকে ছেড়ে গিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছার আগেই ক্যাপ্টেন দেখতে পান কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আর সামনে যাওয়া নিরাপদ নয়। এতে ক্যাপ্টেন বাধ্য হয়েই একঘণ্টা পর বেলা আড়াইটায় ঢাকায় ফিরে আসেন।
আর বিমানের এয়ার সার্ভিস শাখার মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, যাত্রীদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হলেও তাদের শাহজালালের লাউঞ্জে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে তাদের সন্ধ্যার দিকে আবার ওই ফ্লাইটেই ইয়াঙ্গুন নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ড্যাশ-৮ এয়ারক্র্যাফটি মিশর থেকে লিজে আনা। এর ক্যাপ্টেন হাতিমও মিশরের নাগরিক। তিনি পেশাদার হলেও কাজের অনুমোদন (ওয়ার্ক পারমিট) ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিমানে চাকরি করছেন।
কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশান সিস্টেম নষ্ট হলে কী ক্ষতি হতে পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের একজন প্রকৌশলী বলেন, আকাশে ওড়ার পর যতোই ওপরের দিকে ওঠে, ততোই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমে যায়। উড়োজাহাজের ভেতর ও বাহিরের বাতাসের চাপের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান ঘটে। কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম এই ব্যবধানের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য রক্ষা করে। এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ও কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেমের মধ্যেও ভারসাম্য থাকে বলেই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন। এ সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেলে ভেতরে অক্সিজেন সংকটের শিকার হতে হয়। এজন্য বাধ্য হয়েই তাৎক্ষণিকভাবে সামনের সিটে থাকা অক্সিজেন মাস্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওপরের কেবিন থেকে নিচে পড়ে যায় এবং যাত্রীরা সেটা মুখে লাগাতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে বিমানের একজন সাবেক পরিচালক বলেন, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট ওপরে উঠলেই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমতে থাকে। ৪০ হাজার ফুট ওপরে উঠলে সেটা আরও কমে যায়, তখন ভেতরে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে যে অক্সিজেন পান, তা এই প্রেসারাইজেশান সিস্টেমের কারণেই। এ কারণে ফ্লাইট টেক অফের আগেই কেবিন ক্রুরা এমন জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে ওপরের কেবিনে থাকা মাস্ক পড়তে হয়- তার কৌশল জানিয়ে দেন। এই প্রেসার সিস্টেম নষ্ট হওয়ার পর আধঘণ্টার মধ্যেই ফ্লাইট জরুরি অবতরণ আবশ্যক হয়ে পড়ে। নইলে শ্বাসকষ্টে যাত্রীদের মৃত্যুও হতে পারে।
তবে, একের পর এক কেন বিমানের ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে- সে বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রীয় এ এয়ারলাইন্সটির কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬