বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সন্তানের উপর এই ঝগড়ার যে ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেটা খুবই জরুরি। এর ফলে শিশুর যে ক্ষতি হয় তার হাত থেকে সন্তানকে বাঁচাতে পিতামাতারা কী করতে পারেন?
বাড়িতে কী ঘটছে সেটা আসলেই দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বড় রকমের ভূমিকা রাখে।
পিতামাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক কেমন এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন সেটাও। তাদের একজন আরেকজনের সাথে কী ধরনের আচরণ করছেন সেটা শিশুর বেড়ে ওঠার উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। বলতে গেলে শিশুর সবকিছুই এতে প্রভাবিত হয়। যেমন তার মানসিক স্বাস্থ্য কি রকম হবে, পড়ালেখায় সে কেমন করবে, এমনকি ভবিষ্যতে এই শিশু যেসব সম্পর্কে জড়াবে সেগুলো কেমন হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ঝগড়াবিবাদ নানা রকমের হয়ে থাকে। কোন কোন বিতর্কের হয়তো প্রভাবই পড়ে না, এমনকি শিশুর ভবিষ্যতের জন্যে সেটা হয়তো ভালোও হতে পারে, কিন্তু পিতা মাতা যখন একে অপরের প্রতি ক্রুদ্ধ আচরণ করেন, করেন চিৎকার চেঁচামেচি, অথবা তারা একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন, তখনই হয়তো কিছু একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এবিষয়ে বাড়িতে পিতামাতার আচরণ পর্যবেক্ষণ করে ব্রিটেনে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত কয়েক দশকে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, তাদের ঝগড়াঝাঁটির প্রভাব পড়তে পারে ছ’মাস বয়সী শিশুর উপরেও।
বাড়িতে যখন তারা বাবা মায়ের মধ্যে কোন ধরনের সহিংস সম্পর্ক দেখে তখন তাদের হৃদকম্পন বেড়ে যেতে পারে কিম্বা মানসিক চাপের কারণে হরমোন-জনিত সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।
এর ফলে বাচ্চা, শিশু এবং অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্ক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, ভুগতে পারে ঘুমের সমস্যায়, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায়, বিষণ্ণতা এবং এধরনের পরিবেশের মধ্যে খুব বেশিদিন থাকলে তাদের আচরণগত গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কখনও কখনও শিশুদের উপর এই প্রভাব যেরকম হতে পারে বলে ধারণা করা হয় তার চেয়ে অন্যরকমও হতে পারে।
যেমন ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ কিম্বা পিতামাতা হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা আলাদা থাকবেন- এর ফলে হয়তো অনেক শিশুর উপরেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে সবসময় যে ঠিক এরকম হবে তা কিন্তু নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণে শিশু যতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আসলে তারচেয়েও বেশি সমস্যা হয় বাবা মায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সময়, তার আগে ও পরে দু’জনের মধ্যে যেসব ঝগড়াঝাঁটি হয় সেসবের কারণে।
একইভাবে, এরকম পরিস্থিতিতে শিশু কিভাবে বেড়ে উঠবে বা সাড়া দেবে সেটা তার জিনগত গঠন বা জেনেটিক্সের উপরেও নির্ভর করে। তবে এটা ঠিক যে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পিতামাতার আচরণ বড় রকমের প্রভাব ফেলে এবং সেখান থেকে তার ভেতরে দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা ও মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।
সেকারণে বাড়ির পরিবেশ এবং সেই পরিবেশে শিশুরা কীভাবে বেড়ে উঠছে সেটাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এই বড় রকমের ভূমিকা রাখে।
তবে এর কেন্দ্রে রয়েছে- বাবা মায়ের মধ্যে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কতোটা ভালো কিম্বা কতোটা খারাপ এসবের উপরেই নির্ভর করছে শিশুর বেড়ে উঠা।
শিশুকে নিয়ে ঝগড়া
কিন্তু পিতামাতার মধ্যে এই ঝগড়াঝাঁটি হয় এই শিশুকে কেন্দ্র করে তখন কি হবে?
প্রথমত এটা মেনে নিতে হবে যে কোন বিষয়ে পিতামাতার একমত হওয়া কিম্বা ভিন্নমত পোষণ করা কিম্বা ঝগড়া করা স্বাভাবিক একটি ঘটনা। একসাথে এক বাড়িতে বসবাস করতে গেলে এরকম কিছু মনোমালিন্য হবেই।
কিন্তু এটা নিয়ে পিতামাতা যখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন, এবং সেটা যদি খুব বেশি ঘন ঘন হয়, এর মাত্রাও হয় তীব্র, এবং সেটা সমাধানের দিকে না গড়ায় তাহলে শিশুর উপরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আর সেটা যদি শিশুটিকে নিয়ে হয় তাহলে সেই প্রভাব হবে আরো বেশি। কারণ এই ঝগড়াঝাঁটির জন্যে শিশুটি তখন নিজেকে দায়ী করতে থাকে। শিশুটি তখন মনে করে যে সে-ই হলো এই সমস্যার কারণ ও কেন্দ্র। তার কারণেই এতো মারামারি।
সূত্র, বিবিসি