আন্তর্জাতিক ডেস্ক: একটা সন্তানের জীবনে বাবা-মা পরিবার সব কিছুর দরকার। এর কোনটি যদি সন্তানের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তাহলে সমস্ত সুখ ও যেনো হারিয়ে যায় তাদের জীবন থেকে। এই দুঃখগুলো কেউ প্রকাশ করতে পারে কেউবা গুমরে মরে নিজের কষ্ট বুকে চেপে রেখে। সম্প্রতি জলপাইগুড়িতে শিক্ষার্থীদের এক শিক্ষক নিজের থেকে কিছু লিখে আনতে বলেন। তার পরই এক শিক্ষার্থী বাবাকে ছেড়ে থাকার কষ্টগুলো তার খাতায় লিখে আনে। যা দেখে শিক্ষকই কেঁদে ফেলেছেন। এবং তার বাবার সাথে যোগাযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির গড়ালবাড়ি হাইস্কুলে বসে প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ মেয়েটির খাতা পড়ে শোনাচ্ছিলেন। মেয়েটি লিখেছে ‘আমার বাবা আমাকে খুব ভালবাসে। বাবা আমাকে ওখানে (বাবার কাছে) নিয়ে গেলে কোনও অভাব রাখবে না। কিন্তু আমি যাব না। আমি জানি না, বাবার ভালবাসা কাকে বলে। কারণ কোনও দিনও বাবার ভালবাসা পাইনি।’’ সে লিখেছে, অনেক ছোটবেলায় এক বার বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু খুব কান্নাকাটি করায় ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন মায়ের কাছে। লিখেছে, ‘‘আমার ইচ্ছে, বাবা-মা-ভাইবোন মিলে একসঙ্গে থাকি। কিন্তু সেটা তো কোনও দিনও সম্ভব নয়।’
বাংলার শিক্ষক সকলকে বলেছিলেন, নিজের মন থেকে একটা গল্প লিখে নিয়ে এসো। ১৫ বছরের মেয়েটি লিখল তার জীবনের গল্প। লিখল, ন’বছর আগে যে দিন মা তাকে কোলে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, সে দিন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। লিখল, বাবা তাকে খুব ভালবাসে, কিন্তু সে কোনও দিন সেই ভালবাসার স্বাদ পায়নি। মেয়েটির সেই ‘গল্প’ নাড়িয়ে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষকদের। তাঁরা এখন চাইছেন, মিলে যাক বিচ্ছিন্ন হওয়া এক পরিবারের দুই অংশ, যাতে মেয়েটি ফিরে পায় তার হারিয়ে যাওয়া জীবন।
গল্পের শেষে শিক্ষককে ছাত্রী লিখেছে, ‘স্যার, আমার মনের এই কথা কোনও দিন কাউকে বলিনি। কাউকে যে প্রকাশ করব, এমনটা ভাবিওনি। আপনাকে সব জানালাম। সব কিছু বলতে পেরে আমার খুব হালকা লাগছে।’
লেখাটা শুনতে শুনতে বাংলার শিক্ষক বিপ্লব পাত্রের চোখের কোণ চিকচিক করছে। তিনি বললেন, ‘সবাইকে স্বরচিত গল্প লিখে আনতে বলেছিলাম। ওই মেয়েটি নিজের জীবনের গল্পই লিখে এনেছে।’
শিক্ষকেরা বলছিলেন, ছাত্রীটি ক্লাসে কারও সঙ্গেই বেশি কথা বলে না। উদাস হয়ে বসে থাকে। তবে পড়াশোনায় মনোযোগী। তাঁদের কথায়, পারিবারিক অশান্তি কি ভাবে শিশু মনে প্রভাব ফেলে, এই ঘটনা তার উদাহরণ। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রীটির মানসিক পরিস্থিতি বিপজ্জনক। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে ওর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ প্রবল হবে। ভবিষ্যতে ওর নিজের সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।’