ডেস্ক নিউজ: নূতনের কেতন উড়িয়ে আবার এল বৈশাখ। বাঙালীর নববর্ষ। এর সঙ্গে বিদায় হলো ঘটনাবহুল আরও একটি বছরের। আগামীকাল শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুর হয়ে যাবে বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব। মহাকালের রথ তার যাত্রাপথে পেরিয়ে গেল বাংলা ১৪২৪ সনের সীমানা। পহেলা বৈশাখ আবহমানকাল ধরে বাঙালীর প্রিয় দিন। ৩০ চেত্রের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রভাত নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হল বাঙালীর ঘরে ঘরে।
ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশজুড়ে মানুষের ঘরে ঘরে জেগেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। বিগত রাতের সঙ্গে সঙ্গে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। শুরু হল নতুন আশা ও উদ্দীপনার নতুন বছর। নতুন বছর সবার জন্য মঙ্গলময় হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা সৃষ্টি হউক সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। আবহমান কাল ধরে এই নববর্ষ বাঙালীর জীবন-সংস্কৃতির অঙ্গ।
সারাবিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও নাগরিক জীবনের এবং সরকারী কর্মকান্ডের সবকিছু চলে ইংরেজী ক্যালেন্ডার হিসাবে। তারপরও বাঙালীর গভীর মানসে বাংলা নববর্ষের স্থান অনেক উঁচুতে। বাঙালীর মনপ্রাণ জুড়ে রয়েছে বাংলা নববর্ষ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতী, কামার-কুমারসহ নানা পেশার মানুষ যুগ যুগ ধরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে আনন্দ-উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ব্যবসায়ীরা এখনও হিসাবের নতুন খাতা-হালখাতা খোলেন বৈশাখের প্রথম দিনে।
এ জন্য মিষ্টান্নেরর আয়োজন থাকে। নববর্ষ উপলক্ষে দেশে গ্রামেগঞ্জে নদীর পাড়ে, খোলা মাঠে কিংবা বটগাছের ছায়ায় মেলার আয়োজন করা হয়। দোকানিরা মুড়ি, মুড়কি, পুতুল, খেলনা, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশিসহ বাঁশ- বেত-কাঠ-মাটির তৈরি বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন।
আমাদের নাগরিক জীবনেও নববর্ষের আবেদন কম নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকেই ছায়ানটের উদ্যোগে রমনার বটমূলে বৈশাখের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখ বরণ উৎসব শুরু হয় মহাসমারোহে। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের চারু কলার উদ্যোগে বৈশাখী র্যালীর আয়োজন করা হয়। রঙবেরঙের মুখোশ পরে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে র্যালীতে অংশ নেয় সকল শ্রেণীর মানুষ। সকাল না হতেই সোহরাওয়াদী উদ্যান, টিএসসি চত্বরসহ গোটা রমনা অঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠে বৈশাখ উপলক্ষ্যে ফ্যাশন হাউসগুলোতেও থাকে নানা আয়োজন। পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও বৈশাখের নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকে।
এভাবে বৈশাখ আসে আমাদের প্রাণের উৎসব হয়ে। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলা সনের উৎপত্তির সঙ্গে জড়িত এই দেশের সংস্কৃতির জীবনধারা এবং প্রকৃতির অবস্থার সঙ্গে ফসলের মৌসুম এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন তারিখ তথা পঞ্জিকার প্রবর্তন হলেও এ নববর্ষ উৎসব বাঙালীর চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিশে গেছে। এটা এমন একটা উৎসব যাকে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীসহ সকলেই সর্বজনীনভাবে প্রাণের আনন্দে বরণ করে নেয়। বাংলা নববর্ষ অসুর দূর করে সুর সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের আনন্দ ও উৎসবের, সাহস ও সংকল্পের প্রেরণা যোগায়। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ।
দেশের কল্যাণে সকলেই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অগ্নিশপথ নেওয়ার দিনও এটি। কবির ভাষায়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। এ লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানাই। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছাসহ। স্বাগতম ১৪২৫।