ইতিহাসের মহানায়ক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন সবুজ শ্যামল এই বাংলায়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান, মাতা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই এবং চার বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান ছিলেন। পরিবারের সবাই ‘খোকা’ নামে ডাকতেন। কেউ কি ভেবেছিলো শেখ পরিবারের আদরের দূরন্ত ছোট্ট খোকাই একদিন বিশ্বনন্দিত নেতা হবে? কেউ কি কল্পনা করেছিলো নির্যাতিত-নিপীড়িত অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে মুক্তির পতাকা নিয়ে দাঁড়াবে? সেই অভাবনীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একত্রিত করে মুক্তির মন্ত্র শিখিয়েছেন।
৭মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা হিসেবে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্রকন্ঠে শোনালেন সেই মনোমুগ্ধকর মুক্তির মন্ত্র ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’! লাশের পাহাড় আর রক্তস্রোতের মধ্যদিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।
বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের জন্য জনগণ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে তার সীমাহীন ত্যাগ-তিতীক্ষা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-কারাবন্দির কারণে ইতিহাস তাকে জাতির পিতার স্থানে নাম লেখায়। তাই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তার এই বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব সমাজে আলোচিত হতে থাকে। তার প্রমাণ মেলে দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত মানুষের উক্তিতে।
দেশ স্বাধীনের পর স্বনামধন্য লেখক আহমদ ছফা তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন যে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে”। বঙ্গবন্ধু কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলা চলে আর এ কারণেই বাংলার জনগণের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন “হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ উপাধি।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে দেখা যায়, অসহায় মানুষ দেখলে তিনি ব্যাকুল হয়ে যেতেন। মূলত দেশ ও জনগণই ছিলো চিন্তা ও চেতনার মূল উৎস। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু একশ্রেণির পুঁজিবাদী, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী মানুষের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি এবং তাদের দোঁসররাও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু তাদের কঠিন হুঁশিয়ারি ও সাবধান করার জন্য বলেছিলেন, আমরা যদি পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করতে পারি, আমরা যদি ত্রিশ লাখ শহিদ এবং দু’লাখ মা, বোনের ইজ্জত দিতে পারি- তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এ দেশ থেকে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে পারবো”!
তার এই বক্তব্য ভালো লাগেনি সেসব কুচক্রী মহলের। তাদের নোংরা চিন্তা এবং স্বাধীনতাবিরোধী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাঙালিকে স্বপ্ন দেখানো সেই পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধ্বংস করা এবং এই দেশকে বিশ্ব দরবারে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তোলা। কিন্তু তারা বুঝেনি আদর্শের কখনও মৃত্যু হয় না শেখ মুজিব নিজেই একটি আদর্শ একটি রাষ্ট্র, একটি ইতিহাস। আর এই ইতিহাস গড়েছেন তিনি নিজেই। সময়ের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী তারই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববাসীকে অবাক করে। সেই বিরোধী চক্র নিজেরাই আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে গেছে। তারাই আজ বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। শেখ হাসিনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকার করছে। ইতিহাস বড়ই কৃপণ কাউকে ক্ষমা করে না। বঙ্গবন্ধু আজ নেই কিন্তু তার আদর্শ রয়ে গেছে তার সেই আদর্শের পথে হাঁটছে তরুণ প্রজন্ম। বঙ্গবন্ধুর শারীরিক মৃত্যু ঘটেছে কিন্তু আদর্শিক মৃত্যু ঘটেনি।
সেই কারণেই আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘একজন ব্যক্তির শারীরিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক মিশনকে হত্যা করা যায় না। কারণ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটতে পারে; কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই।’
আজ এটাই প্রমান করে। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন তাই বঙ্গবন্ধু জন্মদিবসটিকে শিশুদিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রতি বছর ১৭ মার্চ শিশুদিবস হিসেবে দেশ ও বিদেশে পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকুক অনন্তকাল বাঙালির হৃদয়ে।” কে বলে মুজিব তুমি নেই, তুমি আছো আমাদের হৃদয় মাঝে লাল টুকটুকে রক্তে মোড়া কাফনে।
লেখকঃ
তুহিন মাহমুদ
ইতালি প্রবাসী