দুই দলই মেলল গোছালো ফুটবলের পসরা। দুই দফা পিছিয়ে পড়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা ফেরালো চট্টগ্রাম আবাহনী। পরে অতিরিক্ত সময়ের জয়সূচক গোলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনালে উঠল প্রতিযোগিতাটির ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সোমবার পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো প্রথম সেমি-ফাইনালে ভারতের দল গোকুলাম কেরালা এফসিকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
শুরু থেকে দারুণ ফুটবলে গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করতে থাকে চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু দুই দিক থেকে চিনেডু ম্যাথিউ ও আরিফুর রহমানের তৈরি করে দেওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হতে থাকেন ফরোয়ার্ড লুকা রতকোভিচ।
তৃতীয় মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জামালের ফ্রি কিক সরাসরি গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমে যায়। পরের মিনিটেই ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা ম্যাথিউয়ের কাটব্যাকে ছোট ডি-বক্সের ভেতর থেকে আরিফুরের দুর্বল প্লেসিং শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান এক ডিফেন্ডার।
পঞ্চদশ মিনিটে রতকোভিচের শট গোলরক্ষক বরাবর যায়। ছয় মিনিট পর আরিফুর থেকে বল পেয়ে ইয়াসিন আরাফাত বাড়ান রতকোভিচকে। আবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে গ্যালারিতে আসা সমর্থকদের হতাশ করেন তিনি।
২৯তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে আসা চট্টগ্রাম আবাহনী। মার্কোস জোসেফের থ্রু পাস ধরে হেনরি কিসেকা একজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। রিয়াদুল হাসান রাফিও পারেননি গোকুলামের এই ফরোয়ার্ডকে আটকাতে। কিসেকার শট কাছের পোস্টের ভেতরের কানায় লেগে জালে জড়ায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্বস্তি ফেরে চট্টগ্রাম আবাহনী শিবিরে। সতীর্থের লম্বা পাস ধরে আরিফুর আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান দিদিয়েরকে। গোলরক্ষককে ঠাণ্ডা মাথায় বোকা বানিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন কোত দি ভোয়ার এই ফরোয়ার্ড।
৬০তম মিনিটে জোসেফের শট পাঞ্চ করে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। তিন মিনিট পর ম্যাথিউ থেকে জামাল হয়ে বল পেলেও গোলরক্ষকের গায়ে মেরে আবারও হতাশ করেন রতকোভিচ। ৭৪তম মিনিটে আরিফুরের কাছের পোস্টে নেওয়া শট ফেরান গোলরক্ষক।
৮০তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন গোকুলাম। কিসেকার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে জোসেফ দুরূহ কোণ থেকে জোরালো শটে নেহালের মাথার পর দিয়ে জাল খুঁজে নেন। একটু পর জামালের শট বাঁক খেয়ে পোস্টের বাইরে দিয়ে গেলে সমতায় ফেরা হয়নি চট্টগ্রাম আবাহনীর।
রতকোভিচ ও আরিফুরকে তুলে ৮৫তম মিনিটে সোহেল রানা ও কাওসার আলি রাব্বীকে নামান চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ। চার মিনিট পর ম্যাথিউর ক্রসে গোলমুখ থেকে দিদিয়ের লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হন। পরের আক্রমণ থেকেই সমতায় ফেরার আনন্দে নেচে ওঠে গ্যালারি। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা সোহেলের কাটব্যাক পেয়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে দিদিয়েরের নেওয়া শট জালে জড়ায়।
যোগ করা সময়ে ডি-বক্সে ম্যাথিউ প্রতিপক্ষের ট্যাকলে পড়ে গেলে চট্টগ্রাম আবাহনীর পেনাল্টি আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
১০৫তম মিনিটে প্রথম এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। রাব্বীর ক্রসে ম্যাথিউয়ের শট এক ডিফেন্ডার ফেরানোর পর ফিরতি হেডে লক্ষ্যভেদ করেন নাইজেরিয়ার এই ফরোয়ার্ডই। চলতি আসরে এটি তার চতুর্থ গোল।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জামালকে তুলে প্লেন পিটারকে নামান মারুফুল। ১১৫তম মিনিটে নাওচাসিংয়ের শট ডিফেন্ডার রহমত মিয়া ফেরালে জয়ের পথে থাকে চট্টগ্রাম আবাহনী।
তিন মিনিট পর ‘অফ দ্য বল’ ইকবল জনকে ঢুশ মেরে লাল কার্ড দেখেন গোকুলামের ফরোয়ার্ড কিসেকা। দশ জনের দল নিয়ে একের পর এক আক্রমণ করলেও গোলের দেখা পায়নি গোকুলাম। জয়োৎসবে মেতে ওঠে চট্টগ্রাম আবাহনী।