মিজানুর রহমান সুহেল, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পাঞ্জারাই গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্বশানের জায়গা প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করে দিলেন উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথকে সাথে নিয়ে সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে উক্ত অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেন।
সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় ২শত বছর ধরে পাঞ্জারাই মৌজার (দাগ নং- ৪২১) এর ১ একর ২১ শতক শ্বশান রকম ভুমি দখলে রয়েছেন। তারা ২ শত বছর ধরে ওই ভূমিতে পূজা, কীর্তনসহ তাদের সব ধর্মীয় সকল উৎসব পালন করে আসছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, বিগত কয়েক বছর ধরে ওই ভূমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে পাঞ্জারাই গ্রামের আলা উদ্দিন, আল-আমিন, আনহার, বজলু ও সজলুগংরা। প্রায় বছরখানেক পূর্বে প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত তাদের শ্বশান রকম ভূমির সিমানার ফিলার হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে তৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সিমানা নির্ধারন করে ফিলার নির্মান স্থাপন করে দিয়ে আসেন। সম্প্রতি ফের উক্ত ফিলার তুলে ফেলে দেওয়া হয় এবং উক্ত ভূমির কিছু অংশে কয়েকটি গাছের চারা লাগিয়ে দেয় আলা উদ্দিন ও আল আমিন গংরা। এতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। অসহায় হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত দরখাস্ত করেন। জেলা প্রশাসক দরখাস্তটি আমলে নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরন করেন। এবং তদন্ত পূর্বক আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথ ঘটনাস্থলে যান এবং অভিযোগের সত্যতা পান। এবং নবীগঞ্জ থানার এস আই পলাশ চন্দ্র দাশ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাথে ছিল। এ সময় নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার নির্দেশে আলা উদ্দিন গংদের অবৈধ দখলে থাকা শ্বশানের ভূমি মুক্ত করা হয় এবং ম্যাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভূমির সিমানায় দেয়াল দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতেই নির্ধারিত সিমানায় ফিলার স্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের উদ্যোশে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, ‘নবীগঞ্জের পাঞ্জারাই গ্রামে শ্বশানের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল স্থানীয় কিছু লোকজন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি দরখাস্ত করেছিলেন। জেলা প্রশাসক আমার (নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন) বরাবর অভিযোগটি পাঠান প্রয়োজনীয় আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত করে আমি অভিযোগের সত্যতা পাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘পূর্বের নির্বাহী কর্মকর্তাও এখানে এসে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সিমানা নির্ধারন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই অবৈধ দখলদাররা সিমানা ফিলার তুলে ফেলে। তাই আবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি সরজমিনে এসে ভূমি ম্যাপে শ্বশানের জায়গার সিমানা নির্ধান করে দিয়েছি।