ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগমকে ‘প্রতারণা করে ফ্ল্যাট পাওয়ার’ মামলা থেকে খালাস দিয়েছে আদালত।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগমকে ‘প্রতারণা করে ফ্ল্যাট পাওয়ার’ মামলা থেকে খালাস দিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের স্নেয়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্ট এ মামলার তিনটি অভিযোগ থেকেই আফসানা বেগমকে অব্যাহতি দিয়েছে।
পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনের এই এমপির বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য ‘গোপন করে’ এবং ‘প্রভাব খাটিয়ে’ লন্ডন কাউন্সিলের তিন লাখ ডলার দামের একটি ফ্ল্যাট পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল এ মামলায়।
আদালতে আফসানা বলেন, তার ‘কর্তৃত্ববাদী’ সাবেক স্বামীই তার আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করতেন। ফ্ল্যাটের জন্য তিনি নিজে ওই আবেদন করেননি। ফ্ল্যাটের জন্য কাগজপত্রে নিজের নাম দেখে তিনি ‘মর্মাহত’ হয়েছেন।
‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ এসব অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও শুনানিতে দাবি করেছিলেন আফসানা। আদালতের রায়ে সব অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
লেবার পার্টির এই এমপি এক বিবৃতিতে বলেন, “এ মামলার ফলে আমাকে দুর্দশায় পড়তে হয়েছে এবং সামাজিকভাবে আমার ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে।”
২০১৯ সালের ব্রিটিশ নির্বাচনে টাওয়ার হ্যামলেটস বারার পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন প্রথমবার নির্বাচন করেই জিতে যান ৩০ বছর বয়সী আফসানা। পরের বছর তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।
মামলায় বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় বাবার পরিবারের সঙ্গে থাকার সময় ২০১১ সালে ফ্ল্যাটের জন্য লন্ডন কাউন্সিলে আফসানার নামে আবেদন জমা পড়ে। পরে তিনি ২০১৩ সালে স্বামীর বাড়িতে ওঠেন।
আফসানার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, স্বামীর বাড়িতে চলে যাওয়ায় তার আর ফ্ল্যাটের দরকার ছিল না। কিন্তু সে কথা তিনি কাউন্সিলকে অবহিত করেননি।
তাছাড়া আফসানার নামে জমা পড়া আবেদনে বলা হয়েছিল, তিন কক্ষের একটি বাসায় গাদাগাদি করে তাকে থাকতে হয়। সে অবস্থা বিবেচনা করেই তাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়। অথচ ২০০৯ সালে তার খালার করা আবেদনপত্রে দেখা যায় ওই বাড়িতে চারটি বেডরুম আছে।
আফসানা বেগম বরাবরই আদালতে বলেছেন, ওই বাড়িতে তিনটি বেডরুমই ছিল এবং সেখানে তার নিজের কোনো আলাদা বেডরুম ছিল না। তার খালা কেন চারটি বেডরুমের কথা বলে আবেদন করেছেন, সেটা তার জানা নেই।
শুনানিতে তিনি বলেন, এহতেশামুল এক ‘কর্তৃত্ববাদী’ পুরুষ, সব সময় ‘জবরদস্তি’ করতেন। তার আর্থিক বিষয়াদি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন সাবেক স্বামী। ওই সময়টাতেই তার নামে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করা হয়, তিনি নিজে সেই আবেদন করেননি।
শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে খালাস পান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সদস্য।
আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। এক সময় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে চাকরি করতেন তিনি।
কুইনমেরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতিতে লেখাপড়া করা আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন।