অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক:: বাংলাদেশে আসন্ন পৌর নির্বাচনের তারিখ ১০-১৫ দিন পেছানো এবং প্রচারণায় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার জন্য প্রদান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে যেসব দাবী তোলা হয়েছে – তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন আগামিকাল সোমবার সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী আজ বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেন। তিনি জানান, দাবিগুলো নিয়ে তারা সোমবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পৌর নির্বাচন এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে ভিত্তিতেই হচ্ছে – এই কারণ দেখিয়ে নির্বাচনের প্রচারণায় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই দাবীকে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করছে বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমান আচরণ বিধি অনুযায়ী এমপিরা স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না।
তবে নির্বাচন অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে দেবার যে দাবি বিএনপি করছে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ তেমন কোন আপত্তি জানায় নি।
অবশ্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আচরণ বিধিতে পরিবর্তন আনার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে – যা সম্পন্ন করার মতো সময় এখন খুব একটা নেই।
মি. হোসেন বলেন. “তফসিল ঘোষণার পর এর মধ্যেই কয়েক দিন পার হয়ে গেছে। আচরণবিধিতে এ্যামেন্ডমেন্ট আনতে হলে নতুন ভাবে বিধি প্রণয়ন করতে হবে। এর পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভ্যালিডেশনের জন্য পাঠাতে হবে। দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনের হাতে সে সময় আছে কিনা।”
সময়সূচী এ বিষয়ক আচরণবিধি পরিবর্তনের দাবী নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল আজ নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করে। অন্যদিকে বিধানটি বলবৎ রেখে নির্বাচন পেছানোর দাবী নিয়ে বিএনপিরও একটি প্রতিনিধিদল আজ দেখা করেছে নির্বাচন কমিশনের সাথে।
প্রথবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের প্রচারণা থেকে বিরত রাখার বিধানকে অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক দাবী করে এনিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকের পর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, “সংসদ সদস্যদের যেহেতু নির্বাহী ক্ষমতা নেই এবং তারা সরকারের সুবিধাভোগী নন, সেই হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়াটা তাদের অধিকার।”
তবে আওয়ামীলীগের এই যুক্তিকে বাস্তবসম্মত মনে করছে না বিএনপি। তারা বলছেন, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে সেখানে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারাও যুক্ত হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আর থাকবে না বলে মনে করছে বিএনপি।
“নির্বাহী ক্ষমতা নেই বলে যে তাদের কোন প্রভাব নেই এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা। যেখানে সম্পূর্ণভাবে দলীয় একটি সরকার কেন্দ্রে অবস্থান করছে, সেখানে একজন সংসদ সদস্যের প্রভাব একজন মন্ত্রী বা কেন্দ্রের যেকোন প্রভাবশালী ব্যক্তির মতোই।” নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকের পর বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক।
তবে বিএনপির যুক্তিকে একটি ‘চতুরতা’ বলে মন্তব্য করছেন আওয়ামীলীগ নেতা মি. হানিফ। তিনি বলছেন, গত সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ফলে সংসদে বিএনপির কোন সংসদ সদস্য না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বাঁধা দেয়ার জন্যই বিএনপি এই দাবী তুলছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আচরণবিধি নিয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি নির্বাচন আরো অন্তত ১৫ দিন পেছানোর দাবীও জানিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ বলছে,কমিশন নির্বাচন পেছালে তাতে তাদের কোন আপত্তি নেই।
নির্বাচন পেছানো এবং সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেয়া এ দুটি বিষয়েই সোমবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।