ডেস্ক নিউজ: বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগের কমিশনের মতো ‘সরকারের ইচ্ছাপূরণে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। ইসিকে সরকারের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার না হয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। সিইসি সমস্বরে বলেছেন, সরকার চাইলে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ইসি।’
‘আমরা বারবার বলেছি, বর্তমান সিইসি আওয়ামী সরকারের কৃপাধন্য। ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্যের সঙ্গে সিইসির একই সুর প্রমাণ করে সিইসি সরকারের নির্মিত সেই পুরনো পথেই হাঁটবেন।’
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন সার্বভৌম নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব দেশে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চাকরি রক্ষার্থে বর্তমান সিইসি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি আমলে নেবেন না।’
‘আবারো দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় আপনি আওয়ামী সরকারের অশুভ ইচ্ছাপূরণের “খাঁচায় বন্দি তোতা পাখি” হবেন না। কেননা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত আর বড় বড় বুলির মায়াজাল সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের ঘাতক প্রতিহিংসাপরায়ণ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ কোনো নীলনকশার ফাঁদে পা দেবে না,’ বলেন রিজভী।
ক্ষমতাসীনদের লুটপাট-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় বাংলাদেশে এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ নৈরাজ্য বিরাজ করছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের ভুল নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে নিতে পারছে না। বিদেশি অনুদান প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন তছনছ হয়ে গেছে। লণ্ডভণ্ড সড়কে মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে। আজকেও পত্রিকার হেডলাইন ব্যাংকগুলোর মূলধন খেয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি টাকা।’
রিজভী বলেন, ‘এখন যে দুঃসময় চলছে, এমন দুঃসময়েও প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পিতার নামে সড়ক নামকরণ ও তা উদ্বোধন করতে চলে গেলেন সুদূর কম্বোডিয়া। বাংলাদেশে যেন হবুচন্দ্র রাজার উদ্ভট রাজত্ব চলছে। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকট। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি ঘর থেকে এক পা ফেললেন না। এই সংকট সমাধানে বিএনপিসহ দেশের বিশিষ্টজন এবং বুদ্ধিজীবীরা চীন-ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে রাজি করতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি উদোগী হলেন না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পিঁয়াজের কেজি ২০ টাকা থেকে এখন ১২০ টাকা, ১০ টাকার চাল এখন ৭০ টাকা, বিদ্যুতের দাম বর্তমান সরকারের আমলে আটবার বাড়ানো হয়েছে, নানা ট্যাক্সের চাপে মানুষের জীবন বিপন্ন, অশান্তির আগুণে ভিতরে ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যদি দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে নামকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।