আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রবাসীরা একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন। গত ৮ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে এ ধরনের হামলার সংখ্যা বেড়েছে।
প্রতি সপ্তাহে ছোট-বড় হামলার শিকার হচ্ছেন নিরীহ বলে পরিচিত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
সবশেষ ৭ ডিসেম্বর কুইন্সের ব্যস্ততম একটি এলাকায় হামলার শিকার হন হাজি আবদুর রহমান (৬০) নামের এক বাংলাদেশি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি।
মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে হামলার শিকার হন আবদুর রহমান। অজ্ঞাত তিন যুবক অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আবদুর রহমানকে গুরুতর আহত করে রাস্তায় ফেলে চলে যান।
এক সপ্তাহের মধ্যে জ্যামাইকায় হামলা ও ছিনতাইয়ের শিকার হন ক্যাবচালক মোহাম্মদ সেলিম ও মোহাম্মদ রহমান। কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় তাঁরা হামলা ও ছিনতাইয়ের শিকার হন।
এসব হামলাকে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে ‘হেট ক্রাইম’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। তবে ক্যাবচালকদের ছিনতাইয়ের জন্য হামলা করা হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
হঠাৎ করে উপর্যুপরি হামলার ঘটনায় প্রবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মুসলিম ও গায়ের রঙের কারণে অনেক সাধারণ কর্মজীবী প্রবাসীর মধ্যে একধরনের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে।
নিউইয়র্কে এর আগে একজন মুসলমান পুলিশ কর্মকর্তাও হামলা ও হেট ক্রাইমের শিকার হয়েছেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, বিদ্বেষপ্রসূত হামলার ঘটনা গত বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে। পুরো আমেরিকায় এ ধরনের অপরাধ এ বছর ৬৭ শতাংশ বেড়েছে বলে এফবিআইয়ের তথ্যে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কে বসবাসরত অনেক প্রবাসী হিজাব পরা নারী-আতঙ্কে তাঁদের চলাচল সীমিত করেছেন।
হামলার শিকার আবদুর রহমান জানিয়েছেন, তাঁর ওপর হামলাকারীদের মধ্যে একজন ভারতীয় ও দুজন শ্বেতাঙ্গ যুবক ছিলেন। অতর্কিতে হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা তাঁকে আমেরিকা ছেড়ে যেতে বলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুর রহমান ৩০ বছর থেকে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার বাঘা গ্রামে। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত সপ্তাহে ২২ বছর বয়সী প্রবাসী মাসুদা আক্তার ট্রেনে করে জ্যাকসন হাইটস থেকে এস্টোরিয়া যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁকে উদ্দেশ করে এক শ্বেতাঙ্গ মদ্যপ ব্যক্তি ‘টেররিস্ট’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
হেট ক্রাইম প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও এ ধরনের অপরাধ দমনে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে টাউন হল মিটিংয়ে হেট ক্রাইম এবং বাংলাদেশিদের ওপর হামলার বিষয়টি নগরীর হেট ক্রাইম টাস্ক ফোর্সের প্রধান মার্ক ম্যাকডনকে জানানো হয়েছে। এনওয়াইপিডি নগরীর হেট ক্রাইম বন্ধে তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হুমায়ুন কবীর।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির সহসভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে প্রবাসীদের ওপর বেশ কটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের পর হামলার ঘটনা বেড়েছে।
আবদুর রহিম বলেন, হামলাকারীরা মনে করছে, নির্বাচনে তাদের ভাবধারার লোক জিতেছে। এখন তারা যা খুশি তা করতে পারবে।
সোসাইটির এই নেতা বলেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। নিজেরা সতর্ক হয়ে চলবেন। হেট ক্রাইম ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সময়ে কমিউনিটিকে আরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা, বিদ্বেষ চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আনার পরামর্শ দেন তিনি।
গত মে মাসে নিউইয়র্কে নামাজ শেষে পথে হামলার শিকার হন ইমাম আলাউদ্দিন আখুঞ্জি ও মুসল্লি তারা মিয়া। এতে একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। অন্যজন মারা যান হাসপাতালে নেওয়ার পর।
৩১ আগস্ট রাতে জ্যামাইকায় নিজ বাসার কাছেই ঘাতকের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারান প্রবাসী নাজমা খানম।