বিএনপি ছেড়ে আসা অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম ও আরিফ মাইন উদ্দিনসহ ‘অচেনা’ অনেককে নিয়ে ‘তৃণমূল বিএনপি’র ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা করেছেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
নতুন কমিটিতে অধ্যাপিকা জাহানারাকে কো-চেয়ারম্যান, আরিফ মইনউদ্দিনকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এস জেড এম সালেহউদ্দিনকে মহাসচিব করা হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা। তবে অধ্যাপিকা জাহানারা ও আরিফ মইনউদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা বলেন, এ বছরের শুরুতে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে তৃনমূল বিএনপির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
“একটু বিলম্বে হলেও এই নতুন দলের আগামী সেপ্টেম্বরের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দল গোছানো এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজ গতিশীল করতে আমি ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করছি।”
দলের নেতাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “চেনা মুখের বাইরে অনেক অচেনা, অজানা মুখ নিয়ে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করছি। এদের হয়তো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, তবে রাজনীতি বোঝেন না এমন নয়। বরং জাতীয় জীবনে সুস্থ রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে তারা তৃণমূল বিএনপির হাতকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।”
অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রীর গণশিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। সে সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে নতুন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি গঠনে ছিলেন তিনি।
চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আরিফ মঈন উদ্দিন জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। জিয়ার মন্ত্রিসভায় ত্রাণ ও পুনর্বাবসন উপমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
তৃণমূল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ইসমত জেরিন খান, আঞ্জুমান সালাউদ্দিন, হাসান ফজলুল হক, ফিরোজউদ্দিন, রাশেদ মাকসুদ খান, নাজমুল হক পিন্টু, কে এম জাহাঙ্গীর মাজমাদার, রুমা আলী, ফেবিয়াল মণ্ডল, এলকে চৌধুরী, সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ, আবু তালেব, সোহানা রহমান, বজলুর রহিম চৌধুরী, কায়সার রাইস চৌধুরী, কামাল উদ্দিন আহমেদ, ইয়াসমিন হাসান ও মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন।
কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন শামীম আহসান। চারজন যুগ্ম মহাসচিব- আক্কাস আলী খান, মাওলানা আবেদ আলী, রেজাউল করীম ও জাহেদ করিম চৌধুরী।
রুকসানা আমিন সুরমা দপ্তর সম্পাদক এবং প্রচার সম্পাদক হয়েছেন মো. তারেক হোসেন। তারেক নাজমুল হুদার প্রেস সচিবও।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আশরাফ উদ্দিন খানকে করা হয়েছে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক।
এছাড়া ৬২ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে তিনটি দল গড়েছিলেন নাজমুল হুদা। এই হিসেবে তৃণমূল বিএনপি তার চতুর্থ দল।
চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা নতুন কমিটি ঘোষণা করে বলেন, “আমরা মনে করেছি, একটি বিকল্প রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে, যেখানে আমরা জনগণ আস্থার জায়গা খুঁজে পাব।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তার এই সংবাদ সম্মেলনে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা আগে কোন দল বা সংগঠনে ছিলেন তা জানানো হয়নি।
মঞ্চে নাজমুল হুদার পাশে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের চেয়ারম্যান এম নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, যিনি এরশাদের সরকারে ধর্মমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয় জোটের মহাসচিব সেকান্দর আলী মনি, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব এ জেড এম সালেহউদ্দিন, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এসডিপির চেয়ারম্যান কে এম জাহাঙ্গীর মাজমাদার ও মহাসচিব রেজাউল করীম উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি ঘোষণার পর সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এসডিপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাজমাদারের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা দল বিলুপ্তি করে নাজমুল হুদাকে ফুল দিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।