নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচাপরপতিকে ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারির অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা সায় দেওয়ার পর সোমবার গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সাজা বাড়ানোর যে ব্যাপারটা, এটা পরিস্থিতির কারণে। আপনারা জানেন বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। তারপরেও আমাদের দেশে এই ঘৃণ্য অপরাধটির যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি, সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এটা বাড়ানো উচিত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারটি সংশোধনীতে এনেছি।”
নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।
ধর্ষণের অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের।
এই প্রেক্ষাপটে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ওই সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
আর গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মঙ্গলবারই ওই অ্যধ্যাদেশ জারি করা হবে।
তিনি বলেন, “এখন আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধু যে মামালাগুলো পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো নয়, যেগুলো পেছনে আছে সেগুলোও, ধর্ষণের পুরনো মামলাগুলো আগে করা হবে। নতুনগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করা হবে আইনি প্রক্রিয়ায়।
“আমরা আইনে বিশ্বাস করি। আইনি প্রক্রিয়ায় যতটুকু সময় লাগে সেই সময়ের মধ্যে ধর্ষণ মামলাগুলোর বিচার যাতে সম্পন্ন করা যায়, সেই চেষ্টা সরকার করবে।… বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অবশ্যই রক্ষা করা হবে।”
তবে শাস্তি বাড়ালেই এ ধরনের অপরাধ কমবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে অনেকের মধ্যে। তাদের ভাষ্য, সাক্ষ্য আইনের জটিলতা দূর করে বিচার পাওয়ার পথ সহজ করতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিকভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা জরুরি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “সাক্ষীর সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ করছি। ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করায় এই অপরাধটি কমে আসবে, না হলে (শাস্তি) বাড়ানোর প্রশ্নে আসতাম না।”
তিনি বলেন, “আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব, তিনি যেন প্র্যাকটিস নির্দেশনা দেন যেন বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এইসব মামলাগুলির বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেন।
“অপরদিকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যে স্টেশন পিপিরা আছেন, তাদের নির্দেশনা দেব যে মামলাগুলো শেষ করার জন্য ইমিডিয়েট পদক্ষেপ নাও।”
আইনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ এর ১ (গ) ধারায় যৌতুকের জন্য সাধারণ জখম করার ঘটনা আপসযোগ্য ছিল না। কিছুদিন আগে হাই কোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই ধারা আপসযোগ্য করার রায় দেয়।
“মানননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৃহস্পতিবার কথা হয়। আইনে সেই ধারাটিকে… সাধরণ জখম… আপসযোগ্য করা হয়েছে।
“যেহেতু সংসদ অধিবেশন নেই, সেজন্য আগামীকাল রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম