মুক্তমত ডেস্ক : প্রিয় সঞ্জীবদা, ফিরে এসে অাবার সেই গান করেন। আপনি গাইবেন অার আমাদের চোখের সামনে ভাসবে করুণ-কঠিন বাস্তবতা। নির্বাক ভাববো- ‘উন্নয়শীল’ দেশের তকমা জুটেছে অামাদের। অথচ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কাঁদছে। নেত্রী বলেছেন, ‘অামরাই পারি। দেশ এখন উন্নয়নশীল’। ‘উন্নয়নের’ এ খবর পৌঁছে গেছে শহরে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
রেডিও, টিভিতে খবর শুনে ‘ডাইল্লা’, ‘কাইল্লা’রা অানন্দে মেতে উঠবে। যদিও অাটার রুটিও তাদের ভাগ্যে জুটেনা ঠিকমতো। দুপুরে খাবার জুটলেও রাতের খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়। তার/তাদের বৃদ্ধ মা অসুস্থ, টাকার অভাবে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় পরীক্ষা দেয়া হয়নি সন্তানের। এরকম হতভাগা কাইল্লা, ডাইল্লা অসংখ্য। আপনার গানে- রাজশাহীর চারাঘাটের দিনমজুর জাহাঙ্গীর হোসেনের মুখটি ভেসে উঠবে। অাপনার গানের সঙ্গে অামরা অনুভব করবো তার হাহাকার। তিনি বলছেন, অামি গরীব, অভাবের সংসারে ঠিকমতো হাড়ি চড়ে না। ছেলের পরীক্ষার ফি দেব ক্যামনে। অামাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে হবিগঞ্জের শচীন্দ্র কলেজের ছাত্রী পপি সূত্রধরের মুখ। সঞ্জীবদা, মেয়েটি অাপনার কাছের প্রতিবেশী। অাপনি বেঁচে থাকলে তাকে নিয়ে একটি গান করতেন হয়তো। কলেজের প্রাপ্য ৫০০০ টাকা দিতে পারেনি পপির বাবা। সইতে পারেনি মেয়েটি। অাত্মহত্যা করে দরিদ্র অনুকূল সূত্রধরের মেয়েটি জানান দিয়েছে, মৌলিক অধিকার- শিক্ষা সবার জন্য না। শিক্ষাকে অনেক অাগে বাণিজ্যকরণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হিসেবে, দেশের ৬৪ ভাগ মানুষ নিজের পকেট থেকে টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। ৫০ ভাগ গুণগত সেবা পাচ্ছেন না। বিশেজ্ঞরা বলছেন, এতে ১৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে।
যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে হাতে হাতুড়ি, কোদাল তোলে নিয়েছে শিশু। অনেকে পরিবহন শ্রমিকের কাজ করছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে তাদের সংখ্যা ৬৫ লাখ। পথশিশু রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি। এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। মেগাসিটি ঢাকাতেই বস্তিতে বাস করে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। যাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য বলতে কিছু নেই।
দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ, এ বছরে নাকি ৮০ হাজার বেকার বেড়েছে। এসবই সরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব। অনেকে মনে করেন এর সংখ্যা আরো বেশি। ঘরে ঘরে বেকার। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়াতে অান্দোলন হচ্ছে। কোটা বিরোধী অান্দোলন হচ্ছে। চাকরি হচ্ছে না। শেয়ার বাজার লুট, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, ব্যাংক দেউলিয়া হচ্ছে, মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, নতুন করে বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকায় চাপ বাড়ছে, কর্ম সন্ধানী মানুষের চাপ। প্রতিদিন সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে অগণিত মানুষ। ফুটপাতে রাত্রিযাপন করছে অগণিত গৃহহীন মানুষ। নানাভাবে লুটেরা শ্রেণি লুটে নিচ্ছে অামজনতার টাকা। টাকার পাহাড় তাদের দখলে। মাথাপিছু হিসেব করলে, লুটেরার টাকা অামার মাথায়, গরীব জনতার মাথায় দিলে মাথাপিছু অায় কম হবে না।
সবকিছুর পরে অাজ সঞ্জীব চৌধুরীকে মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সেই গান, ‘ রেডিওতে খবর দিছে দ্যাশে কোনো অভাব নাই, ডাইল্লার ঘরে, কাইল্লার ঘরে অানন্দের অার সীমা নাই।’ প্রিয় সঞ্জীবদা অাবার এরকম একটি গান শুনতে চাই। অাছেন কোনো সাহসী সঞ্জীবদা!
সাংবাদিক রুদ্র মিজানের ফেসবুক ওয়াল থেকে সং সংগৃহীত