দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকার আদাবর, পল্লবী, কেরানীগঞ্জ ও সাভারে আটজন, রাজশাহীতে দুইজন, দিনাজপুরে তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন ও চুয়াডাঙ্গায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়েছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি। দুর্ঘটনার খবর জানাচ্ছেন অগ্রদৃষ্টির প্রতিবেদক প্রতিনিধিরা :
ঢাকা : রাজধানীর আদাবর ও পল্লবীতে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে রাস্তা পারাপারের সময় মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় মরণ নামে একজন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ আনা হয়। হাসপাতালে এক স্বজন তাঁর লাশ শনাক্ত করেছেন। নিহত মরণের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে। তার বাবার নাম আমির হোসেন। পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে। এদিকে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় মুন্সীগঞ্জের আহমদ আলী সিমেন্টবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি মুন্সীগঞ্জেরই একটি সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক। পল্লবীতে একটি দোকানে সিমেন্ট নামানোর সময় নিজের ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন আহমদ। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢামেক জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে ভোর ৬টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মোজাম্মেল হক।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী পরিবহনের একটি বাস বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় বেপরোয়া গতিতে অন্য একটি বাসকে অতিক্রম করতে গেলে সামনে থাকা একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এরপর বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভ্যানগাড়িসহ এক পথচারীকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশে ময়লার স্তূপের ওপর উঠে যায়। ঘটনাস্থলেই ওই পথচারী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন। নিহত পথচারীর নাম মোতালেব। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। অন্যদিকে সাভার মডেল থানার পেছনে বৃহস্পতিবার ট্রাকচাপায় এক যুবক নিহত হন। তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
অন্যদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মোল্লার ব্রিজে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাসের ধাক্কায় ভ্যানের চার যাত্রী আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেকে নিহত শামসুল হকের (৬৫) বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায়। মিটফোর্ডে নিহত মো. দুলাল মিয়া (৪৫) ও মো. মোজাম্মেল হকের (৬০) বাড়ি পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার চামী গ্রামে এবং মো. রহিমের বাড়ি (৪০) উপজেলার গগন গ্রামে। তাঁরা কাঠ চেরাইয়ের শ্রমিক। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম জানিয়েছেন, আরাম পরিবহনের একটি বাস রাতে ঢাকা থেকে মাওয়ার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের মোল্লার ব্রিজে আসার পর রাজেন্দ্রপুর থেকে কদমতলীর দিকে আসা একটি ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ওই চারজন আহত হন। পরে তাঁদের মৃত্যু হয়।
রাজশাহী : বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জের একটি পেট্রলপাম্প থেকে তেল নিয়ে একটি নসিমন মহাসড়কে উঠছিল। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী কেয়া পরিবহনের একটি বাস এটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নসিমনের দুজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনুপনগরের মেসের আলীর ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (৪০) ও আবদুর রহমানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ জানান, এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধারের পর তাদের পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
দিনাজপুর : বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ নামক স্থানে দিনাজপুর-দশমাইল সড়কে ট্রাক ও ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাতজন। নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন সদর উপজেলার সাত্তার (৩৫) ও বাবু (৪০)। আহত সাতজনের মধ্যে আমজাদ (২৮), কালাম (৩০) ও ইলিয়াসের (৩২) অবস্থা আশঙ্কাজনক। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেকুজ্জামান জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের নিচ থেকে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ভটভটিটি উদ্ধার করে। ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডি এলাকায় বৃহস্পতিবারসকাল সাড়ে ৯টার দিকে বালুবাহী ট্রাক্টরের চাপায় বাদল পরামানিক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত বাদল পরামানিক নাচোলের ভেরেন্ডি সাহাপুর গ্রামের ললিত পরামানিকের ছেলে। নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফাসির উদ্দীন জানান, সোনাইচণ্ডি বাজারে যাওয়ার পথে বালুবাহী একটি ট্রাক্টর তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই বাদল পরামানিক মারা যান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। দুর্ঘটনার পর ট্রাক্টরচালক পালিয়ে যায়।
চুয়াডাঙ্গা: সদর উপজেলার পাঁচমাইল-ভাণ্ডারদহে যাত্রীবাহী বাস উল্টে মো. রাব্বী (১৩) নামের সাইকেল আরোহী এক শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই পরিবারের ছয়জনসহ ১০ বাসযাত্রী। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। নিহত রাব্বী সদর উপজেলার সুবদিয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শাহ ফরিদ পরিবহনের (ফরিদপুর জ ১১-০০২৩) একটি বাস চুয়াডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিল। আজ বেলা ৩টার দিকে বাসটি পাঁচমাইল-ভাণ্ডারদহ নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ২০ ফুট গভীর খাদে উল্টে যায়। এ সময় সাইকেল আরোহী শিশু রাব্বী এবং বাসের ১০ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। আহত বাসযাত্রীরা হলেন জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়ার একরামুল হক (৫৫), তাঁর স্ত্রী শানু বেগম (৫০) ও ছেলে আল আমিন (১২), মেহেরপুরের গাংনীর সানোয়ার হোসেন (৩৭ ), তাঁর স্ত্রী হিরা খাতুন (৩০) ও ছেলে রওশন আলী (১০), যশোরের বাঘারপাড়ার হাদিউজ্জামান (৩০) ও খামারপাড়ার আসাদুজ্জামান (৪৫), মাগুরার রথতলা এলাকার কৃষ্ণপদ ও খুলনার বয়রা এলাকার করিম উদ্দিন (৪৫)। আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সদর থানা থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। চুয়াডাঙ্গা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই বাসটি ভস্মীভূত হয়ে যায়।