ডেস্ক নিউজ : শারীরিক প্রতিবন্ধী একরামুলের জন্ম থেকেই বামহাত নেই, ডান হাত আছে তবে তাও অস্বাভাবিক। মাত্র ৬/৭ ইঞ্চি লম্বা। এ হাতে আছে দুই আঙ্গুল। এ দু’টি আঙ্গুলে কলম চেপে ধরে বাহুতে ঠেকিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে একরামুল।
মঙ্গলবার ইতিহাস পরীক্ষার পর কথা হয় একরামুলের সঙ্গে। সে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের নজিব উদ্দিনের ছেলে। তার বাবা অন্যের জমি চাষাবাদ আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে তাদের। দুই ভাই ও দু’বোনের মধ্যে সে ছোট। তবে তার অন্য তিন ভাই-বোন স্বাভাবিক। দু’বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।
একরামুলের বাবা নজিবউদ্দিন জানায়, ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। অভাবের সংসার হলেও তাকে কখনো লেখাপড়া থেকে বিরত রাখিনি। প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩ দশমিক ৬০ গ্রেড পায়। সাধ্যের মধ্যে থেকেই যতটুকু পারছি তা তার পেছনে ব্যয় করছি। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় জাবরহাট হেমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে মানবিক বিভাগ হতে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনের ৩ তলার ১৬নং কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে। আগের পরীক্ষা গুলো খুব ভাল হয়েছে বলে জানায়।
একরামুল জানায়, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে দুই আঙ্গুলে চামচ ধরে খাওয়া-দাওয়া করি। গোসল করতে মা ও ভাবী সাহায্য করেন। বন্ধুরা সব খেলা খেলতে পারে কিন্তু আমি খেলতে পারি না। তবে সে ফুটবল ভালো খেলতে পারে বলে জানায়। এবারের এসএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করছেন সে। একরামুলের স্বপ্ন একদিন সরকারি চাকরি করে পরিবারের দুঃখ লাঘব করবে। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সে প্রতিবন্ধী হয়েও কষ্ট করেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
পীরগঞ্জ বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক সামসুন নাহার জানান, একরামুল প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী হওয়ায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান সাধারণ পরীক্ষার্থীদের থেকে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ দিয়েছেন। নিদর্শনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সে পরীক্ষায় আধা ঘন্টা বেশি পাচ্ছে।