অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ নতুন নেতৃত্ব নিয়ে মতভেদ থেকে দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের জাসদে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
নতুন কমিটিতে তাদের ‘সম্মানজনক’ পদে রাখা হয়েছে এবং ‘সম্মান’ নিয়েই তারা দলে কাজ করতে পারবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাসদ কার্যালয়ে রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনু বলেন, “আমি মনে করি, বাংলাদেশের এই যুগসন্ধিক্ষণে মঈন উদ্দীন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও ডা. মোস্তাক হোসেনের আচরণ দুর্ভাগ্যজনক। সেটা দলের জন্য দুঃখজনক ঘটনা। আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি। আমি প্রকাশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা বিভ্রান্তি ত্যাগ করে দলের কাজে ফিরে আসবেন।
“আমরা যে কমিটিতে আপনাদের রেখেছি, আপনারা সেখানে সন্মানের সাথে দলের নীতি নির্ধারণে ও সাংগঠনিক কর্ম পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।”
আগের রাতে দলীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নেতা সাংসদ শিরিন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করার বিরোধিতা করে বেরিয়ে এসে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন জাসদের একাংশ। সেখানে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি এবং নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে মঈন উদ্দীন খান বাদলকে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের বিদায়ী কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাদল এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দলত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
দলীয় সভাপতি ইনুর পদে থাকা নিয়ে কোনো অসন্তোষ না থাকলেও শিরিন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক করার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “আপনার (ইনু) সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকতে পারে, অনুরাগ থাকতে পারে, সবকিছুই থাকতে পারে। সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।
“কিন্তু সেখানে আমরা লক্ষ করলাম- সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিরিন আক্তারের নাম প্রস্তাব করা হল। এটা আসতেও পারে। তার নাম প্রস্তাব করার পর সমর্থন করা হয়েছে। সেটাও হতে পারে। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে কেউ বললো পাস পাস, শিরিন আক্তার পাস। সেটাও হতে পারে।
“কিন্তু আপনার (ইনু) অনুগ্রহপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার বলতে পারে না, পাস হয়ে গেছে।”
কাউন্সিল থেকে বের হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বাদল বলেছেন, ইনু-শিরিন সমর্থকদের একাংশ পেশি শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় কাউন্সিলে মোট ১২০০ কাউন্সিলর ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে গোপন ব্যালটের ভোটে শিরিন আক্তার ৬০২ ভোট পান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী নাজমুল হক প্রধান পান ১৩৭ ভোট। সেখান থেকে নির্বাচন কমিশন শিরিন আক্তারকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।
এছাড়া সভাপতি পদে তার পুনর্নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কারও কোনো আপত্তি ছিল না বলে জানান ইনু।
“সভাপতি পদে যখন আমি নিজে প্রার্থী হই, তখন কণ্ঠভোটে আমাকে সমর্থন জানায় কাউন্সিলররা। ওই সময়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মঈন উদ্দীন খান বাদল, নাজমুল হক প্রধান ও মোস্তাক হোসেনরা হাত তুলে সমর্থন জানায়।”
ইনুকে সভাপতি পুনর্নির্বাচনে সমর্থনের কথা মঈন উদ্দীন বাদলও স্বীকার করেছেন।
ওই প্রেক্ষাপটে দলের একাংশের কাউন্সিল কক্ষ ত্যাগকে ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন হাসানুল হক ইনু।
শিরিন আক্তার
তিনি বলেন, “মঈন উদ্দীন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং মোস্তাক হোসেন- এরা রহস্যজনক কায়দায় দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা তৈরির মধ্য দিয়ে কার্যত মহাজোট সরকারবিরোধী, জঙ্গিবাদীদের সহযোগিতা করার জন্য তারা এই ভূমিকা রেখেছেন। এই ভূমিকা ন্যক্কারজনক এবং রাজনীতির নীতিবহির্ভূত।”
তবে এই নেতাদের পরীক্ষিত সহযোদ্ধা অভিহিত করে প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে বসার কথা বলেছেন ইনু।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে আমি জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সামনের কাতারে আছি। এই লড়াইয়ের জন্য হুসেইন মো. এরশাদের সঙ্গে বসেছি; তাহলে মঈন উদ্দীন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সাথে বসাবসি করব। কোনো অসুবিধা নাই।”
নতুন কমিটিতে নুরুল আম্বিয়া, বাদল, নাজমুল হক প্রধান, মোস্তাক হোসেনকে সন্মানজনক পদে রাখা হয়েছে বললেও তাদের কী পদ দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে তা প্রকাশ করেননি ইনু।
তবে পরে নতুন সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেছেন, নতুন কমিটিতে আম্বিয়া, বাদল ও মোশতাককে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে রাখা হয়েছে। আর নাজমুল হক প্রধানকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে।
দলছুট নেতাদের ফিরে আসার আহ্বানের কারণ জানতে চাইলে ইনু বলেন, “অনেক সময় পদলোভে অনেকে উন্মাদ হয় সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীদের দলের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে হিসেবে সেটুকু ধৈর্য আমাদের আছে।
“আমাদের দল, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারায় আমরা চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রজ্ঞা ও ধৈর্য ছিল বলে আমরা সবাই আবার একীভূত হয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। সুতরাং এটা নতুন ঘটনা না। সেই কারণে তারা যতোই বিভ্রান্ত হোক না কেন, আমার দায়িত্ব, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- তাদের সময় দেওয়া।”
বিদ্রোহীদের দাবি মানা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা কোনো দাবি করেননি। তাদের যে রাজনৈতিক দাবি- জোট থেকে বেরিয়ে আসা, ১৪ দল থেকে বেরিয়ে আসা, সরকার থেকে বেরিয়ে আসার এই রাজনৈতিক দাবি কাউন্সিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা আমার মানা, আমাদের মানার কোনো এখতিয়ার নাই।
“জঙ্গিবাদের প্রশ্নে যারা দলের ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি করে, অনৈক্য করে, সরকারের ভেতরে জোটের ভেতরে ভাঙনের কথা বলে, এই মুহূর্তে তা জঙ্গিবাদকে সাহায্য করে।”
তাহলে কেন তাদের আবার কমিটিতে রেখেছেন- প্রশ্ন করা হলে ইনু বলেন, “কমিটিতে রেখেছি, তারা আমাদের পুরনো নেতা। আমরা মনে করি, এটা সাময়িক বিভ্রান্তি। আবার তারা দলে ফিরে আসবেন।”
মঈন উদ্দীন খান বাদলের সঙ্গে যেসব সংসদ সদস্য রয়েছেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা কঠিন প্রশ্ন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে বলা যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার ছাড়াও কার্যকরী সভাপতি কাজী হাবিবুর রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসেন আখতারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান প্রয়াত নেতা কর্নেল তাহেরের ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইনু ও শিরিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।