থাইল্যান্ডে চিয়াং রাইয়ের গুহায় আটকে পড়া ১৩ জনকে উদ্ধারের আগে তাদের সাথেই কয়েকটি দিন গুহার মধ্যে কাটিয়েছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তার – যার নাম রিচার্ড হ্যারিস।
তিনি গুহার মধ্যে তিন দিন কাটিয়েছেন, আটকে পড়াদের স্বাস্থ্যের তত্বাবধান করেছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য তৈরি করেছেন। এর পর সবার শেষে যারা গুহা থেকে বের হয়েছেন – তাদেরও একজন ছিলেন এই ডাক্তার।
তারই নির্দেশনা অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া কিশোরদের আগে বের করা হয়েছে – এক অত্যন্ত জটিল উদ্ধার কাজের ভেতর দিয়ে।
থ্যাম লুয়াং গুহার ভেতরে আটকা পড়া ১২ জন কিশোর এবং তাদের ফুটবল কোচসহ দলটি যে জীবিত আছে তা যখন জানা যায়, তখন ছুটি কাটাচ্ছিলেন এ্যাডিলেইড শহরের বাসিন্দা এই ডাক্তার।
কিন্তু দলটিকে খুঁজে পাওয়ার খবর শুনেই তিনি ছুটি থেকে ফিরে আসেন এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে সেখানে চলে যান।
কিন্তু উদ্ধারকাজ শেষ করার আনন্দের মধ্যেই হঠাৎ আসে তার এক ব্যক্তিগত দু:সংবাদ যে এর মধ্যেই ডাক্তার হ্যারিসের বাবা মারা গেছেন।
ডাক্তার রিচার্ড হ্যারিস কাজ করেন একজন এ্যানাস্থেটিস্ট হিসেবে – অর্থাৎ চিকিৎসার প্রয়োজনে মানুষকে যে চেতনানাশক দিতে হয় – তার একজন বিশেষজ্ঞ তিনি। তিনি কাজ করেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এ্যামবুলেন্স সার্ভিসে ।
ব্রিটিশ উদ্ধারকর্মীরা আগে থেকেই তাকে চিহ্নিত করেছিলেন তার বিরল প্রতিভার জন্য। কারণ রিচার্ড হ্যারিস এমন এক ব্যক্তি যিনি একই সাথে একজন পেশাদার এ্যানাস্থেটিস্ট এবং গুহা থেকে মানুষকে উদ্ধার করার কাজে একজন আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ।
ডা. হ্যারিস এ ছাড়াও একজন অভিজ্ঞ ডুবুরি এবং একজন আন্ডাওয়াটার ফট্রোগ্রাফার। তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন এবং ক্রিসমাস দ্বীপপুঞ্জে গুহার ভেতরে অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে ২০১১ সালে তারই এক বন্ধুর মৃত্যু হয়। তা ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় একাধিক দুর্যোগ ও ত্রাণ মিশনে কাজ করেছেন তিনি।
সে কারণেই, থাই সরকারের উচ্চতম পর্যায় থেকে অস্ট্রেলিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছিল যেন ডা. হ্যারিসকে এই উদ্ধারকাজে যোগ দেবার জন্য পাঠানো হয়। অস্ট্রেলিয়া সরকার নিজেই এ কথা জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী জুলি বিশপ বলেছেন, ডা. হ্যারিস ছিলেন এই উদ্ধার তৎপরতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। উদ্ধার তৎপরতার প্রধান এবং চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারোঙ্সাক ওসোতানাকর্ন বলেন, অস্ট্রেলিয়ানরা অনেক সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে এই ডাক্তার। তার কাজে তিনি শ্রেষ্ঠ।
তার বন্ধু সু ক্রো বিবিসিকে বলেছেন, রিচার্ড হ্যারিসের ব্যক্তিত্বও এমন যে তার উপস্থিতি ওই বাচ্চাদের আশ্বস্ত করেছে এবং তাদের সহায়তার জন্য তিনিই ছিলেন সেরা লোক। তিনি ওই বাচ্চাদের উদ্ধার অভিযানের জন্য সর্বোত্তমভাবে তৈরি করে দিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমের মতো সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটেও ডা. হ্যারিস এবং তার সঙ্গী আরেক অস্ট্রেলিয়ান ডুবুরি-চিকিৎসক ক্রেগ চ্যালেন-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হচ্ছে।
এই উদ্ধার অভিযানে মোট ২০ জন অস্ট্রেলিয়ান কাজ করেছেন – যার মধ্যে আছেন পুলিশ ও নৌবাহিনীর ডুবুরি।
সূত্র, বিবিসি