আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সব জনমতকে ভুল প্রমাণ করে তুরস্কে রবিবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে।
রোববারের (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তারা। একক সরকার গঠনের জন্য সংসদে ২৭৬ আসন প্রয়োজন হলেও একেপির নিশ্চিত হয়ে গেছে ৩১৬ আসন।
দেশটির নির্বাচন কমিশন সূত্র ও সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে সোমবার (২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, এ ফলাফলের মাধ্যমে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত হয়ে গেল ২০০২ থেকে সরকারে থাকা একেপির।
গতকালের নির্বাচনে ১৬টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। গত রাতে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ৮১.৩৭ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। নির্বাচনে ৮৭.২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। একে পার্টি ভোট পেয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী অপর তিন দলের সম্মিলিত ভোটের চেয়েও বেশি ভোট তারা পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্য বামপন্থী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। দলটি ২৫.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৩৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনালিস্ট অ্যাকশন পার্টি (এমএইচপি) ৪২টি আসন পেয়েছে। কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি) ৫৯টি আসন পেয়েছে। তবে তাদের ভোট অনেক কমে গেছে।
নির্বাচনে এ নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, এ ফলাফল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তুর্কি জনগণের জবাব। এ ফলাফল জনতার আস্থার নিদর্শন।
তিনি কুর্দি গেরিলা বাহিনী পিকেকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ১ নভেম্বর তুর্কি জনগণ এটাই স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছে যে, গণতন্ত্র, জাতীয় স্বার্থ, আইনের শাসন ও উন্নয়নের দেশে চাপ, হুমকি, রক্তপাতের জায়গা নেই।
ফলাফল পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও একেপির নেতা আহমেদ দাউতোগলু রাজধানী আঙ্কারায় দলের প্রধান কার্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আজ গণতন্ত্রের বিজয়ের দিন। এটা কেবল আমাদের (একেপির) জয় নয়, পুরো তুরস্কবাসীর। এই নির্বাচনে কেউ হারেনি। পুরো তুরস্ক জিতেছে, গণতন্ত্র জিতেছে, আমাদের প্রজাতন্ত্র জিতেছে।
তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও অস্থিরতার মূলোৎপাটন করতে আমাদের সরকার সবসময় ঐক্যবদ্ধ তুর্কি জনগণকে পাশে চাইবে।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, বর্তমান সংবিধানের পরিবর্তে নতুন ও উদার একটি সংবিধান দরকার আমাদের। যে সংবিধানে শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা, স্বচ্ছ ও কার্যকর সরকার কাঠামো থাকবে এবং যার কারণে আমলাতান্ত্রিকতা তুরস্কের রাজনীতিতে ব্যাঘাতের সৃষ্টি করতে না পারে।
তবে, এ নির্বাচনকে কেবল একেপির জয় না বলে অনেকে ‘আধুনিক ইসলামপন্থি’ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জয়ও বলছেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর গত আগস্টে এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেন। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদটি রাষ্ট্রীয় প্রধানের হলেও ক্ষমতা-প্রভাব বিবেচনায় ‘অনেক বেশি মুখাপেক্ষী’। এরদোয়ান চান সংবিধান সংশোধন করে সে ‘মুখাপেক্ষী’ পদটিকে স্বাধীন করে আরও বেশি ক্ষমতা দিতে অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রেসিডেন্টশাসিত করতে। তার ‘ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীরা’ মনে করেন, এ সুযোগ পেলে এরদোয়ান আরও অন্তত ১০ বছর রাষ্ট্রীয় শাসনভারে থেকে তুরস্ককে ‘ইসলামি রাষ্ট্রে’ পরিণত করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্বাচনে একেপি তাদের সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও ভোট পেয়েছে, যে নাগরিকরা গত জুনের নির্বাচনের পর অস্থিতিশীল ও সংঘাতপূর্ণ তুরস্ক দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং স্থিতিশীলতার জন্য একেপির দ্বারস্থ হতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এরদোগান প্রতিষ্ঠিত একে পার্টি ২০০৩ সাল থেকে দেশটি শাসন করে আসছে। আর এরদোগান সেই সময় থেকে প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করছেন। তার নেতৃত্বে তুরস্ক এখন বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশের একটিতে পরিণত হয়েছে।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই