শাহজাহান আকন্দ শুভঃ ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে নানামুখী চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে মোসাদকে কাজে লাগাতেই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করা হয়।’ রিমান্ডে থাকা বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কানেকশনে শুধু বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীই নয়, বিভিন্ন পেশার আরও বেশ কয়েক ব্যক্তি ফেঁসে যেতে পারেন। ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। গতকাল ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন। আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে তথ্য বের করতে সোমবার দিবাগত সারা রাত আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের একটি টিম। এদিকে মোসাদ কানেকশন থাকা ব্যক্তিদের একটি তালিকা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গেছে। ওই তালিকায় সনাতন ধর্মের বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে।
সূত্র জানায়, আসলাম চৌধুরীকে আটকের পর তাকে নিয়ে বিএনপির এই নেতার ঢাকার বাসা ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তার ঢাকার বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে একটি কম্পিউটার, পাসপোর্ট এবং আসলাম চৌধুরীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন। ওই কম্পিউটারের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আসলাম চৌধুরীর সেলফোনে কারা ফোন করেছেন, তিনি কাদের ফোন করেছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশের তদন্তকারী দল। আসলাম চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার একটি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এসব ব্যাপারেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলের প্রভাবশালী নেতা ও মোসাদের দায়িত্বে থাকা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ভারতের নয়াদিল্লি, লন্ডন এবং কলকাতায় গোপন বৈঠকের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি নিজের ইচ্ছায় মোসাদের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করিনি। আমাকে বৈঠক করতে পাঠানো হয়। আসলাম চৌধুরী পুলিশের কাছে বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েক নেতার নামও বলেছেন। ওই নেতাকে বর্তমানে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে এজন্য খোঁজখবর রাখছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
ওদিকে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠক ঘিরে এখন বাংলাদেশের রাজনীতি সরব হয়ে উঠেছে। সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে মোসাদ ইস্যু। এই ইস্যুতে আসলাম চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিএনপি প্রচ- চাপের মুখে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করতেই বিএনপি মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার এ অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। তারা এও বলছেন, বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখতে সরকার নিজেই ষড়যন্ত্র করে মোসাদ ইস্যু সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে প্রশ্নমালা তৈরি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তৈরি করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ টিম। এই টিমের সদস্যরা মিন্টো রোড গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আসলাম চৌধুরীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সোমবার দিবাগত সারা রাত আসলাম চৌধুরীকে ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। নির্ঘুম রেখে ভোর পর্যন্ত তাকে ব্যাপক জেরা করা হয়। দফায় দফায় জেরার মুখে আসলাম চৌধুরী অনেক তথ্যই পুলিশের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করতে নানামুখী চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে মোসাদকে কাজে লাগাতেই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করা হয়।