অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক:: জামালপুরের কয়েকটি ইউনিয়নে এবারের বোরো মৌসুমে ‘ব্রি-৫৮’ ধানের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ জাতের ধান চাষ করে একরপ্রতি প্রায় ৮০ মণ কম ফসল পাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা, নিম্নমানের কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ সরবরাহ করায় এ বিপর্যয় ঘটেছে।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহামুদপুর, নাংলা ও কুলিয়া ইউনিয়নের মাঝে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল রয়েছে। সেখানকার শত শত একর জমি বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে চাষিরা সেখানে শুষ্ক মৌসুমে কেবল বোরোর আবাদ করতে পারেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও এক ফসলি ওই জমিতে কৃষকরা ‘ব্রি-২৮’ ও ‘ব্রি-২৯’ ধান চাষ করেন। আবার বেশি ফলনের আশায় অনেকেই চাষ করেন নতুন জাতের ‘ব্রি-৫৮’ বা ‘ভিত্তি-৫৮’ জাতের ধান। কিন্তু ফলন বিপর্যয়ের মুখে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
কৃষকদের দাবি, ‘ব্রি-২৮’ ও ‘ব্রি-২৯’ চাষে একরপ্রতি গড়ে ১০০ মণ ফলন হয়েছে। অন্যদিকে বিঘাপ্রতি ব্রি-৫৮ এর ফলন মাত্র ২০ মণ।
মেলান্দহের মাহামুদপুর ইউনিয়নের আগ-পয়লা গ্রামের কৃষক বাদশা মণ্ডল জানান, এ বছর তিনি এক একর জমিতে ‘ব্রি-২৮’ এবং দেড় একর জমিতে ‘ভিত্তি-৫৮’ জাতের বোর ধান চাষ করেন। পাশাপাশি দুটি ধান ক্ষেতে একই ধরনের পরিচর্যা ও একই অনুপাতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। ‘ব্রি-২৮’ জাতের চেয়ে ‘ভিত্তি-৫৮’ জাতের ধান গাছ দেখতেও সবল হয়। কিন্তু ধান পাকার আগেই অধিকাংশ গাছ শুকিয়ে মারা যায়।
বাদশা মণ্ডলের দাবি, তিনি মাহমুদপুর বাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হক আলম সরকারের কাছ থেকে ‘ব্রি-৫৮’ ধানের বীজ নিয়েছেন। মাহমুদপুর ইউনিয়নের পয়লা গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান জানান, তিনিও আব্দুল হক আলম সরকারের কাছ থেকে বীজ নিয়েছেন। ‘ধান পাকার আগেই ক্ষেতের অর্ধেক ধান মরে গেছে। এখন দেখছি এক বিঘা জমিতে সাত মণ ধানও হবে না।’
মাহমুদপুর ইউনিয়নের সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত মো. বুলবুল আহম্মেদ জানান, ব্রি-৫৮ জাতের ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই এলাকার কৃষক আলহাজ একাব্বর আলী, খট্টু মণ্ডল, বাক্কা মণ্ডল, হক্কু আমির, ভাদু লাল মুচি, ইন্তাজ আলী, আব্দুল মান্নান, নান্নু মিয়া, ছায়ের উদ্দিন ও আব্দুস সামাদ মণ্ডলের মতো অনেকে। মেলান্দহ উপজেলার মাহামুদপুর, নাংলা ও কুলিয়া ইউনিয়নের শত শত কৃষকও হতাশায় ভুগছেন।
বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হক আলম সরকার জানান, টাঙ্গাইল মধুপুরের ‘মেসার্স মনিরা ট্রেডার্স’ থেকে ব্রি-৫৮ জাতের বীজ সংগ্রহ করেন। আলম সরকার বলেন, ‘শত শত কৃষক ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ার খবর আমি শুনেছি। তবে বীজ মেয়াদহীন কিংবা নিম্নমানের ছিল কি না, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এ দায় বীজ বিপণন বিভাগ এবং মেসার্স মনিরা ট্রেডার্সের।’
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান, ব্রি-৫৮ জাতের ধানে প্রতি বিঘায় ২৫ মণ ফলন হওয়ার কথা। অথচ মাহামুদপুর, নাংলা ও কুলিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা অনেক কম ফসল পাচ্ছেন বলে তিনি শুনেছেন। শিগগিরই সরেজমিনে ফলন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করা হবে বলেও জানান তিনি।