জাকির সিকদার,ঢাকা থেকে : জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ৪৩ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ খারিজ করে দিয়েছে প্রেসক্লাবের কমিটি। গত মঙ্গলবার একজন সিনিয়র সদস্যকে বাদ দেওয়ার পর বুধবার ৪২জনকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
স্বঘোষিত কমিটির এই তৎপরতাকে ‘নজীরবিহীন’ আখ্যা দিয়ে ‘বিস্ময় ও তীব্র ক্ষোভ’ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য আসাদুজ্জমান আসাদকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর বুধবার প্রেসক্লাবের ৪২ জন সহযোগীর সদস্যপদ খারিজ করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী ১৫ নভেম্বর তাদের প্রেসক্লাবের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার কথা ছিল।
এই ৪২ জন সাংবাদিক হলেন- ইত্তেফাকের মো. সাইদুল ইসলাম ও আবু তালেব, আমার দেশ এর সৈয়দ মিজানুর রহমান, মো. বশীর আহমেদ ও নাছির উদ্দিন শোয়েব, ইনকিলাবের ওমর ফারুক আল হাদী, মেহেদী হাসান পলাশ ও রফিক মুহাম্মদ, দিনকালের বাবুল তালুকদার, আতিকুর রহমান রুমন, মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও কামার ফরিদ, আমাদের সময়ের হুমায়ুন কবীর খোকন, নয়াদিগন্তের আমানুর রহমান, মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম সরকার, জাকির আবু জাফর, ফয়েজুল্লাহ ভূঁইয়া, ইমরান আলম ও সৈয়দ শামসুজ্জামান নীপু, সংগ্রামের মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, শরীফ ইবদুল গোফরান, আহসান হাবীব ও একেএম কামরুজ্জামান হিরু, মানবজমিনের আজহার মাহমুদ, দীন ইসলাম ও কাজী বোরহান উদ্দিন, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রায়হান এম চৌধুরী ও মো. আমিনুল হক, যুগান্তরের আলাউদ্দিন আরিফ ও তৌহিদুর রহমান, নিউএজ এর খাজা মাইনুদ্দিন, ইন্দ্রজিত কুমার ঘোষ ও খাদিমুল ইসলাম, আমার কাগজের জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, যাায়যায় দিনের জাহিদুল ইসলাম রণি, প্রোব নিউজের ইরতিজা নাসিম আলী, প্রথম আলোর মঞ্জুর আহমেদ, একুশে টিভির কনক সরওয়ার, বৈশাখী টিভির অশোক চৌধুরী, ভোরের কাগজের মীর আফরোজ জামান ও আরটিভির ফারুক খান।
বিএফইউজে-ডিইউজে’র নিন্দা
৪৩ জনকে প্রেসক্লাব থেকে বাদ দেওয়া ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব এম এ আজিজ এবং ডিইউজে’র সভাপতি আবদুল হাই শিকদার।
তারা এক যুক্ত বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, “পেশাদার সাংবাদিকদের সদস্যপদ দেয়ার মতলবি সেøাগান দিয়ে সরকারি ছত্রছায়ায় ক্লাব দখলের পর এখন কেবলমাত্র ভিন্ন মতের কারণে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে পেশাদার সাংবাদিকদের সদস্য পদ কেড়ে নেয়ার ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
সাংবাদিক নেতারা বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিগত নির্বাচিত কমিটির দেয়া ১৭১ জন সদস্যের এক বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রাককালে বুধবার ৪২ জন সদস্যকে কোন কারণ ছাড়াই ছাটাই করা হয়েছে। এছাড়া আগের দিন ক্লাবের সিনিয়র সদস্য আসাদুজ্জমান আসাদকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এভাবে দখলদার কমিটি ক্লাবে অভাবনীয় স্বেচ্ছাচারিতার ঘৃণ্য রাজত্ব কায়েম করেছে।”
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, “যে ৪২ জনের সদস্য পদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাককালে খারিজ করা হয়েছে তাদের সকলেই পেশাদার, সক্রিয় ও গণমাধ্যম জগতে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানও রয়েছেন ওই ৪২ জনের তালিকায়। রয়েছেন বিএফইউজে ও ডিইউজে’র কয়েকজন নির্বাচিত নেতাও। তাদের সদস্য পদ দেয়া হয়েছে বিগত নির্বাচিত কমিটির সর্বসন্মত সিদ্ধান্তে। জাতীয় প্রেস ক্লাবকে চিরস্থায়ীভাবে কুক্ষিগত করে একটি দলের ক্লাবে পরিণত করার সুদূরপ্রসারি চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এক সঙ্গে ৪৩ জনের সদস্যপদ কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ঘটনা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সোনালী ঐতিহ্যের ললাটে আরেকবার কালিমা লেপন করেছে বলে উল্লেখ করেন নেতারা।”
বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা এ জাতীয় হঠকারি অপকর্ম থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, “অন্যথায় উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব তাদেরকে বহন করতে হবে।”