যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সহযোগিতা করতে চেয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্যে ব্যবস্থা নিতে রুশ নেতা ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন।
মস্কো এখনও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে এধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
এই রিপোর্টের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবহিত করা হয়েছে। এরপর মি. ট্রাম্প শুধু বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফলে তার কোন প্রভাব পড়েনি।
পরে মি. ট্রাম্প এর জন্যে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির ‘চরম উদাসীনতা’কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এর ফলেই এসব হ্যাকিং সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদনের এসব তথ্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ঘোষণা করে যে ভোট যন্ত্রকে সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেমলিন ‘স্পষ্টভাবেই মি. ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
আরো বলা হয়েছে, রাশিয়ার লক্ষ্য ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর জনগণের আস্থাকে নষ্ট করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নামে কালিমা লেপন করা যাতে সম্ভাবনায় প্রার্থী হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়।
“আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার আদেশ দিয়েছিলেন,” বলা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
তবে এবিষয়ে মি. পুতিনের ভূমিকা কি ছিলো সে প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে রাশিয়ার ভূমিকার মধ্যে ছিলো:
১. ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি এবং শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতাদের ইমেইল হ্যাক করা।
২. এসব হ্যাকিং এর মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলো উইকিলিকসের মতো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া।
৩. এসব করতে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করা যাতে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা নোংরা মন্তব্য করেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মি. পুতিন মি. ট্রাম্পকে পছন্দ করেন কারণ তিনি রাশিয়ার সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: সাদ্দাম হোসেনকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদের অভিজ্ঞতা
ইটালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকনি এবং সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডার, যাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ছিলো তাদের সাথে কাজ করার ভালো অভিজ্ঞতা আছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনে, বলা হয়েছে মার্কিন প্রতিবেদনে।
রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, রাশিয়ার কোন কোন গোয়েন্দা এসব হ্যাকিং এর জন্যে দায়ী তাদের পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের জানা আছে। তবে সেসব প্রকাশ করা হয়নি।
এই প্রতিবেদনটি এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পেশ করা হয়। তারপরই গোয়েন্দা প্রধানরা মি. ট্রাম্পকে এসব বিষয়ে অবহিত করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মি. ট্রাম্প এসব গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন।
পরে তিনি এক বিবৃতিতে এবিষয়ে রাশিয়াকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে চান নি। তবে বলেছেন, গোয়েন্দা বিভাগের কাজের প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে।
তিনি বলেন, “রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশ ও বাইরের বিভিন্ন গ্রুপ এবং মানুষ অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে আমাদের সরকারি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটির সাইবার নিরাপত্তা তখন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর এর কোন প্রভাব পড়েনি।”
এসব মোকাবেলা করার জন্যে কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সে বিষয়ে তার ক্ষমতা গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।
ক্রেমলিন থেকে এই রিপোর্টের বিষয়ে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি তবে রুশ সংবাদ মাধ্যমে এসব দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।