ডা. ফারহানা মোবিন: শীতকালীন সব্জি গাজর। তবে বর্তমানে সারাবছরই গাজর পাওয়া যায়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’ এমন একটি ভিটামিন, যা মানুষের প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। এই ভিটামিনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ‘বিটা ক্যারেটিন’। বিটা ক্যারেটিন চোখ, চুল, ত্বক ভালো রাকার জন্য যথেষ্ট উপকারী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় বিটা ক্যারেটিন।
সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর-জ্বর ভাব, টনসিলের জায়গায় ব্যথা, গলা ব্যথা, এই সমস্যা দূর করবে ভিটামিন ‘সি’। দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি কালচে হয়ে যাওয়া, জিহ্বাতে ঘা, ঠোটের কোণাতে ঘা প্রতিরোধ করার জন্য গাজড় রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গাজর। এতে রয়েছে এ্যান্টি অক্সিডেন্ট নামের একধরনের উপাদান। যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। চোখের জন্যও গাজর ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’। ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা (বিশেষত ছোটদের) চোখের মণিতে কারো দাগ, চোখের পাপড়িতে ইনফেকশান জনিত সমস্যা, চোখ ওঠা, এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
গর্ভবতী ও মাতৃদুগ্ধ দানকারী মায়েদের জন্য গাজার যথেষ্ট উপকারী সব্জি। এতে নেই কোন কোলস্টেরল বা চর্বি। চর্বি দেহের ওজন বাড়ায়। আর এই চর্বি কমাতে সাহায্য করে গাজর। তবে উপকারের আশাতে গাজর অধিক খাওয়া যাবেনা। কারণ গাজরে রয়েছে চিনি। অধিক ওজন সম্পন্ন শিশু ও বয়স অনুযায়ী মোটা ব্যক্তিরা গাজর খুব বেশি খেলে দেহে বাড়তি চিনি জমে যাবে। যদি দৈহিক পরিশ্রম একেবারেই না হয়। তাই উচ্চতা ও ওজন বুঝে গাজর খাওয়া উচিৎ। গাজর রক্তের প্রধান রক্তকণিকা আর.বি.সি (জ.ই.ঈ) কে শক্তিশালী করে। পরিণামে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই রক্ত বাড়াতে হলে প্রতিদিন অন্তত একটি কঁচি গাজর খান। বড় কোন অপারেশনের পরে, যেসব শিশুরা অতিরিক্ত খেলাধূলা করে, বাড়ন্ত শিশুদের জন্য গাজর খুব পুষ্টিকর সব্জি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ জাতীয় উপাদান। এই আঁশ জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
নতুন শিশু যাদের দাঁত বের হয়েছে তার নিয়মিত গাজরের খিচুড়ী খেলে যথেষ্ট উপকার হবে। বিশেষত যে শিশুরা কৌটার দুধ খায় তাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য বেশি হয়। এতে খনিজ লবনও রয়েছে বিভিন্ন রকম। এই খনিজ লবণগুলো দাঁত, হাড়, নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঠোক কালো যাদের তারা নিয়মিত গাজর খান। এই সব্জি ঠোক উজ্জ্বর রাখতে অবদান রাখে। এখানে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটও রয়েছে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা তুলনামুলকভাবে কম খান।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য গাজরের ভূমিকা অপরিহার্য্য। তাই গাজর থাকুক শিমু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার খাবারের তালিকায়।
ডা. ফারহানা মোবিন
মেডিকেল অফিসার, গাইনী এ্যান্ড অবস;
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ।