চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রইছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও সরকারি বরাদ্ধ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে কমিটির সভাপতি ইদ্রিছ খান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারও ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অপর দিকে রইছ উদ্দিন নিজের দূর্নীতি আড়াল করতে সুনামগঞ্জ আদালতে নতুন কমিটির ১১জন, জেলা প্রশাসকও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ ১৬জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করছেন সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন। এতে গ্রামের লোকজন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এনিয়ে যে কোন সময় সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। ফলে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ায় চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
গত ১৯জুলাই কমিটির দেয়া অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রইছ উদ্দিন শিক্ষক নামের একজন দূর্দান্ত প্রতারক ও জালিয়াত বটে। তিনি গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগে দীর্ঘ দিন থেকে নানা জাল-জালিয়াতি, প্রতারণাও সরকারি বরাদ্ধ লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে তার সহযোগিদের নিয়ে এলাকায় বিরোধও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে গত ৫জুনসহ বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের জাউয়াবাজার জনতা ব্যাংকের একাউন্ট থেকে সরকারি বরাদ্ধের প্রায় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৪সালে স্কুলে যোগদান করলেও পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হবার পর জালিয়াতি করে ১৯৯০সালে নিয়োগ দেখান। পুলিশী তদন্তে রইছ উদ্দিনের এসব জালিয়াতি ও টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তথ্য প্রমাণসহ বেরিয়ে পড়ে। এ ছাড়া রইছ উদ্দিন জাল সার্টিফিকেট দিয়ে এ বিদ্যালয়ে তার চাকুরীর বিষয়টিও আজ সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। এব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, শিক্ষক নামধারি প্রতারক রইছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ এবং মামলা রয়েছে। এরমধ্যে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার নাগদরা গ্রামের শান্তা আক্তার ১৫মার্চ ২০১৫ইং রইছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা (নং-৩৯১৬) দায়ের করেন। মামলায় রইছ উদ্দিন প্রতারণার মাধ্যমে শান্তা আক্তারের ৪লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারাধীন এ মামলায় তিনি এখন জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে এ প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন আজ হুমকির মূখে পড়েছে। সে তার দূর্নীতির সহযোগিদের নিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসি। এজন্যে জালিয়াতি ও নানা প্রতারণার হোতা রইছ উদ্দিনকে স্কুল থেকে অপসারনসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এ দাবি ভূক্তভোগিদের।
ব্যাপারে রইছ উদ্দিন জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নহে। অবৈধভাবে কমিটি করার কারণে তিনি সুনামগঞ্জ আদালতে কমিটির ১১জন, জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ মোট ১৬জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মানিক চন্দ্র দাস জানান, রসুলপুর স্কুলটি দূর্গম এলাকায় অবস্থিত। এটি ছাড়া রসুলপুরসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান নেই। এখানে কমিটি অনুমোদনের পর সাবেক কমিটি অযথা জামেলায় জড়াচ্ছে। তবে শিক্ষকের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে গ্রামের গ্রুপিংয়ে স্কুলের শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি হবেনা বলে জানান।