চান মিয়া,ছাতক, সুনামগঞ্জঃ ছাতকে অর্ধ শতাধিক বিয়ের হোতা বহুরূপী এক লন্ডনীর জমজমাট প্রতারনা ব্যবসা চলছে। আবু আছাদ চৌধুরী মাহবুব ওরফে সমশেদ আলী নামের বিয়ে পাগল লন্ডনী দোলারবাজার ইউনিয়নের কুর্শী গ্রামের মৃত আনোয়ারুল হক চৌধুরী ওরফে আলতাব আলীর পুত্র। লন্ডন নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সে অর্ধশতাধিক বিয়ে করেছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সে প্রতারনা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। মাহবুব বিয়ে করলেও ডিভোর্স দেয় তার সহযোগি আব্দুল্লা। নতুন স্ত্রীর নামে ভূঁয়া কাগজ-পত্র তৈরী করে লন্ডন প্রলোভন দেখিয়ে শ্বাশুড়বাড়ি থেকে লাখ লাখ টাকা এনে আত্মসাত করে। লন্ডনে গিয়ে স্ত্রীর নামে মিথ্যা ও সাজানো অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে তাকে ডিভোর্স দেয়। তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ কারীকে হতে হয় মামলা-হামলা ও হয়রানীর শিকার।
জানা যায়, বিয়ে পাগল মাহবুবের বিয়ের মধ্যে প্রথম স্ত্রী ৬সন্তানের জননী জাহানারা বেগম লন্ডনে অবস্থান করছেন। অন্যান্যরা হলেন, ২য় স্ত্রী চরমহল্লা ইউনিয়নের কামরাঙ্গি গ্রামের মাহমুদ আলীর মেয়ে ১সন্তানের জননী মাছুমা বেগম, ৩য় স্ত্রী ছাতক পৌরসভার বৌলা গ্রামের আজাদ মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার লিমা, ৪র্থ স্ত্রী সিলেটের দক্ষিণ সরমার খালপার গ্রামের মকবুল আলীর মেয়ে ফাতেমা বেগম, ৫নং স্ত্রী জালালাবাদ থানার রাজারগাঁও গ্রামের মৃত সমর আলীর মেয়ে সেলিনা বেগম, ৬নং স্ত্রী মঈনপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে শাপলা বেগম, ৭নং স্ত্রী হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ থানার মাজের মহল্লা গ্রামের আরজু মিয়ার মেয়ে সিপন বেগম। এছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় হালিমা বেগম, সাহানা বেগম, আকলিমা আক্তার, মরিয়ম বেগম, জোসনা বেগম, লিবিয়া আক্তার, মিনা আক্তার, লাইলী আক্তারসহ তার বিয়ের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। বিয়ে করে সিলেটের পলাশ হোটেল ও হিমেল হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেলে অল্প কয়েকদিনের সংসার করে ডিভোর্স দেয়। তার ২য় স্ত্রী মাছুমা বেগম বসবাস করতো সিলেট এয়াপোর্টস্থ বড়শালা গ্রামে মাহবুবের আলীশান ফুলতলী বাগানবাড়ি নামের বাসায়। এবাড়ি থেকে মাছুমাকে বের করতে আব্দুল্লাহ প্রাণ নাশের হুমকি দিলে সিলেট বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডাইরী নং-১০৭, তাং-৩.৩.২০১৬ইং করা হয়। এছাড়া প্রতারক আবু আছাদ চৌধুরীর স্ত্রী পরিচয়ে মঈনপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে শাপলা বেগম ছাতক থানার মামলা নং- ২০,তাং- ২১.০৬.২০১৬ইং দায়ের করেন। কিন্তু ২০১৫সালের ৩ডিসেম্বর সে শাপলাকে আইনগতভাবে তালাক দেয়। এরপরও শাপলা তাকে স্বামী দাবি করে গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের আব্দুল মনির পুত্র বিয়ের ঘটক রাজনও তার পুত্র মাছুমকে আসামি করে। এক সময়ে রাজনই ছিল তার অপকর্মের প্রধান সহযোগি। একই মামলায় তার ভগ্নিপতি কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের নোয়াব আলীর পুত্র খালেদকে আসামী করে। তারা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এছাড়া এসব অপকর্মের প্রধান হোতা হাফেজ আব্দুল্লা। সে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামের তেরাব আলীর পুত্র। বর্তমানে মাহবুবের পরিচালিত কুর্শী মদিনাগঞ্জ মাদরাসার সূপার পদে কর্মরত রয়েছে। সে সবগুলো বিয়ের কাবিননামায় সাক্ষী এবং প্রতিটি বিয়ের আকদ সে নিজে পড়িয়ে। সব স্ত্রীর তালাকনামায় মাহবুবের পরিবর্তে আব্দুল্লার স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়। মাহবুব লন্ডনে বসবাস করলেও এখানে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাবতীয় অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। আব্দুল্লার নেতৃত্বাধীন এসিন্ডিকেটে রয়েছে রাজন, সিলেট বড়শালা গ্রামের মানিক মিয়া ও সিএনজি চালক রাজা মিয়া, আম্বরখানা ইমিগ্রেশন ওয়ার্ল্ডের আব্দুস সালাম ও আব্দুল মুমিন প্রমূখ। প্রতিটি বিয়ের কাবিনে সাক্ষী ও সনাক্তকারি হিসেবে এদের নাম রয়েছে। এছাড়া লন্ডন নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাহবুবকে অনেকগুলো বিয়ে এনে দেয় ঘটক রাজন। বিনিময়ে সে আসমা আক্তার লিমার ৮০হাজার, মাছুমা বেগমের কাছ থেকে ৩লাখ টাকাসহ অন্যান্যের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। এসব টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে মাহবুবের সাথে রাজনের বিরুধ দেখা দেয়। এনিয়ে ৬মাস আগে ডিভোর্সী সেলিনা বেগমকে বাদি সাজিয়ে খালেদও রাজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এজন্যে মামলা ও হয়রানীর ভয়ে কেউ এসবের প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। জানা গেছে, মাহবুবের পিতার নাম ছিল আলতাব আলী। তারা চৌধুরী কিংবা তালুকদার বংশের লোক নন। কিন্তু জনৈক আনোয়ারুল হক চৌধুরী নামের একব্যক্তির পাসপোর্ট হাতিয়ে নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে পাসপোর্টে নাম বদল করে আনোয়ারুল হক চৌধুরী ওরফে আলতাব আলী হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি ঘন ঘন দেশে এসে খেলুয়া নাও, ষাঁড়, ঘোড়া ও নতুন বিয়ে করা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তার পথ ধরেই হাটছেন পুত্র মাহবুব। সর্বমহলে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন বিয়ে পাগল, প্রতারক ও বহুরূপী নামে। ঘটক রাজন ও প্রতারক আব্দুল্লার মাধ্যমে লন্ডন নেয়ার কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে শ্বাশুড়বাড়ি থেকে টাকা-কড়ি হাতিয়ে নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। অল্পদিন পর ফের দেশে এসে আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে পূনরায় বিয়ে করে। তবে তার অধিকাংশ বিয়েই ৬মাসের বেশী স্থায়ী হয়নি। কোন আবাসিক হোটেল বা বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন বিয়ে করে। হাতের টাকা ফুরিয়ে গেলে স্ত্রীর নামে লন্ডনের কিছু ভূঁয়া কাগজ তৈরী করে তাকে লন্ডনের আশ্বাস দিয়ে শ্বাশুড় বাড়ি থেকে টাকা এনে চম্পট দেয় বিদেশে। পরে স্ত্রীর কোন খোঁজ-খবর না নিয়েই আরেকটি বিয়ে করে। ফোন করলে বলে লন্ডনে আসার পর অনেকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেছো। এর জন্যে সাথে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক নই। এভাবে অপকর্মের অপবাদ দিয়ে একের পর এক স্ত্রীদের আব্দুল্লার মাধ্যমে তালাক দিচ্ছে। লন্ডনে গিয়ে আব্দুল্লার মাধ্যমে নতুন স্ত্রীকে কয়েক মাস খোরাকি দেয়। এ সূযোগে খোরাকি বন্ধের কথা বলে আব্দুল্লা মাহবুবের পরামর্শেই তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ অপবাদেই অনেক স্ত্রীকে নিরাপদে সে তালাক দিয়েছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভূক্তভোগীরা।