জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : চট্টগ্রামের গ্রামীণ সড়ক ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিভিন্ন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বাড়ছে সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রিক্সা চালক, মাদকাশক্ত ও বেকার যুবকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই এক সপ্তাহের চুক্তিতে ৫/৭ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে ড্রাইভার আর চালাচ্ছে এসব অযোগ্য গাড়ি। পুলিশ ও বিভিন্ন মালিক শ্রমিক সংগঠন সমূহের টোকেন ও নকল লাইসেন্স দিয়ে দেদারছে চালাচ্ছে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি। অপরদিকে এসব অযোগ্য চালকদের হাতে বেশি ভাড়া আদায়ের লক্ষে গাড়ি তুলে দিচ্ছে কতিপয় মালিক।
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরার অভিজ্ঞ নিএনজি চালক আব্দুর রশিদ (৬০) অভিযোগ করে বলেন, পূর্বে অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন ড্রাইভিং সার্ভিস পেতে বহুকাটগড় পুড়াতে হতো। অনেক সাধনার পরে মিলত সড়কে গাড়ি চালানোর অনুমতি। কিন্তু এখন রিক্সা-ট্রলির ড্রাইভাররা ১ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামছে। এর কারণে লাইসেন্সধারী ও অভিজ্ঞ চালকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। লিচুবাগান এলাকার নিএনজি চালক রহিম মিঞা জানায়, অভিজ্ঞরা অতিরিক্ত ভাড়ার চুক্তিতে গাড়ি চালাতে অনিহা প্রকাশ করায় এখন নতুন অদক্ষদের কদর বেড়েছে। অপরদিকে চালকের হাতে বেপরোয়া গাড়ি চালনোর কারণে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা সাথে যোগ হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। এসব ড্রাইভাররা সড়কের উপর সিগনাল ছাড়াই যত্রতত্র গাড়ি পার্কি করে এবং এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে সৃষ্টি করছে যানজট।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শান্তিরহাট, পোমরা, গোডাউন, ইছাখালী, রোয়াজারহাট, চৌমুহুনী, লিচুবাগানসহ বিভিন্ন স্পটে যত্রতত্র গাড়ি পার্কি করতে দেখা যায়। তাছাড়াও অধিকাংশ স্টেশনে কোন নিজস্ব স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার উপরই তারা টায় দাড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠানামা করে। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। তাছাড়া মাদকাসক্ত সিএনজি ড্রাইভারদের কারণে অনেক সময় যাত্রীদের বিরম্বনায় পরতে হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই ও চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক সিএনজি অটোরিক্সা ও টেম্পোর প্রায় ৭৫ শতাংশ ড্রাইভার লাইসেন্সবিহীন। এসব ড্রাইভারদের কাছ থেকে দৈনিক হারে চাঁদা আদায় করছে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্পটে। এই চাঁদার টাকা দিনের শেষে ভাগ হয় পুলিশ, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে।
নাম্বারবিহীন সিএনজি চালানার সাথে জড়িত অনেকেই বলছেন পুলিশ ও মালিক শ্রমিক সংগঠনের মাসিক টোকেন নিয়ে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। প্রতি মাসে এই খাতে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয় তাদের। কোনো মাসে টোকেন না নিলে গাড়ি আটক করে মামলা দেয়া হয়। অনেক সময় হালনাগাদ টোকেন সাথে থাকলেও মোবাইল কোর্টের নামে গাড়ি আটক করে টাকা আদায় করা হয়। দাবিকৃত টাকা না দিলে মামলা দেয়া হয়।
সড়কের ভূক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন অদক্ষ চালকেরা বেপরোয়া সিএনজি টেক্সি টেম্পো চলাচলের কারণে প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাদের বেপরোয়া গতির কারণে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও যাত্রীরা বাধ্য হয়েই অনিরাপদ চলাচল করতে হচ্ছে। এসময় যাত্রীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, সড়কের দখল এখন সিএনজি চালিত অটোরিক্সার। যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা খুবই কম।
অদক্ষ সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, তার উপর ফিটনেসবিহীন গাড়ি ছাড়াও অনেক সময় মাদক গ্রহণ করে ড্রাইভিং করার কারণে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে হতাহত হচ্ছে নারী পুরুষ ও শিশুরা।
তাই জনস্বার্থে অদক্ষ চালকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন যাত্রীরা।