জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : প্রতিপক্ষের একজন খুন হওয়ায় বদলা নিতে দেড় মাসের মাথায় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় আবারো জোড়া খুন হয়েছে।
রোববার দিনগত গভীর রাতে সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা গ্রামে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন একই গ্রামের বাদশা মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম(৩০) ও মৃত মনিরুজ্জামানের পুত্র মো. মঞ্জু (২৭)। নিহতরা প্রতিবেশী উকিল আহমদ হত্যা মামলার ১ ও ২নম্বর আসামী। সোমবার ভোর রাতে পুলিশ একই গ্রামের কাইন্দার পাড় সড়ক এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেছে। এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা গ্রামে আবুল কাশেম ও ও মো. মঞ্জুকে প্রতিপক্ষরা রোববার রাত ১১ টায় কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে ও পরে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ সড়কে মাঝখানে রেখে পালিয়ে যায়। গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়রা বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরন করে।
নিহত মঞ্জুর মা লায়লা বেগম (৫৫) জানান, ওসমান ও তোফায়েলরা বিনা দোষে আমার ছেলেকে হত্যা করে। তিনি পুত্র হত্যার উপযুক্ত বিচার দাবি করেননিহত কাশেমের ছোট ভাই মো. তৈয়ব জানান, ওসমান গং তার ভাইকে খুন করেছে বলে তিনি দাবি করেন। থানায় মামলা করে তাদের উল্টো হত্যা করবে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির জোড়া খুনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড়ের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত দুই জন একই এলাকার অন্য একটি হত্যা মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামী। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
খুনের বদলায় ৮ খুন :
কিলিং জোন হিসেবে খ্যাত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা গ্রামে বদুনী বাপের বাড়ি ও পাশ্ববর্তী গঞ্জম আলী সরকারের বাড়ির পশ্চিম সরফভাটা খামারবাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধে ইতিমধ্যে ৮ জন খুন হয়েছে। কোন হত্যা মামলার কুল কিনারা না হওয়ায় বার বার ট্রিপল ও ডাবল মার্ডারের মত ঘটনা ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পাহাড় বেষ্ঠীত এ গ্রামে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে ১৯৯৩ সালে প্রথম খুন হন আবুল হোসেন সওদাগর (৪০)। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ায় এক সাথে একই পরিবারের তিন সহোদর মো. জসিম(৩০), মো. আনোয়ারুল আলম(৩২) ও সফিউল আলম(৩৯)কে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ২০১৫ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি প্রবাসী মো. ইদ্রিছকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। গত ১ মার্চ পশ্চিম সরফভাটা গঞ্জম আলী সরকারের বাড়ির আবুল কালামের পুত্র উকিল আহমদ (৫৫) ও তার পুত্র মো.ইসমাইল (১৬) জঙ্গল সরফভাটা গ্রামের কালিছড়ি সেগুন বাগানে গেলে সেখানে প্রতিপক্ষরা উকিল আহমদকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনা জের ধরে সর্বশেষ রোববার রাতে মো. আবুল কাশেম ও মো. মঞ্জুকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
এলাকার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ও খুনের ঘটনা থামাতে এলাকাবাসীরা একটি পুলিশ ফাঁড়ির পুন:স্থাপনের জোর দাবি জানিয়ে আসলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও পরবর্তীতে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পর এখানে পুলিশ ফাঁড়ি উঠিয়ে নেয়া হয়। পাহাড়ী খামারের জমি, গাছ ও ভিটে বাড়ি নিয়ে এসব হত্যাকান্ডের মূল কারন হিসেবে চিহ্নিত করছেন স্থানীয়রা।