হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী নিয়ামুল হক ইউটিউবে ভিডিও দেখে আগ্রহী হয়ে ক্লোন পদ্ধতিতে মধু চাষ করে সফল হয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তাঁর বাড়ির পাশের খালি জায়গায় গড়ে তুলেছেন ইতালির উন্নত প্রজাতির একটি মৌ খামার। খামারের নাম দিয়ছেন ‘মেসার্স ফাতেমা মৌ খামার’।
নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামের ৩৮ বছর বয়সী হাফেজ নিয়ামুল হক দীর্ঘ দিন ধরে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে বসবাস করছেন। শহরে রয়েছে তাঁর একাধিক ব্যবসা। এছড়াও তিনি নবীগঞ্জ বাজার টেইলার্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। মধু চাষ করে হাফেজ নিয়ামুল হক প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। প্রথম ধাপে মধু সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে অনেকটা সফল হয়েছেন বলেও জানান নিয়ামুল হক। তার এই মৌ খামার দেখে অনেকেই মৌ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
হাফেজ নিয়ামুল হক এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের বলেন, ইউটিউবে একদিন মধু চাষের একটি ভিডিও দেখেছিলেন। আর এ থেকেই মধু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে ঢাকা ও গাজীপুরের কয়েকজন মধু চাষীর সন্ধান পান। পরে যোগাযোগ করে তাদের সাথে দেখা করেন এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষন নেন।
প্রশিক্ষণ শেষে ৩৬টি রাণী মৌমাছি কিনে আনেন নিয়ামুল। অনেকটা সখের বসেই তার নিজ বাড়ি উপজেলার পাঞ্জারাই গ্রামস্থ কয়েক শতক খালি জায়গায় গাজীপুর থেকে আনা ৩৬টি মৌমাছি দিয়েই কাজ শুরু করেন নিয়ামুল। এক পর্যায়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব একটি মৌ খামার। ৩৬টি রাণী মৌমাছি থেকে ক্লোন করে এর সংখ্যা বাড়ান ৭২টিতে। প্রতিটি বাক্স থেকে ৫ থেকে ৭ কেজি মধু সংগৃহীত হয়।
নিয়ামুল হক জানান, প্রতি ১০ থেকে ১২ দিন পরপর মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রথম অবস্থায় ৫ শত ৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলেও জানান তিনি। আর এ থেকে প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা আয় করার স্বপ্নও দেখছেন নিয়ামুল। বর্তমানে মধুর বাক্সগুলো ভ্রাম্যমান হিসেবে আছে। জাফলংসহ বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেতে নিয়ে রাখা হয়েছে মৌমাছির বাক্সগুলো।
এদিকে, এ বছরই প্রথম হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় ৩ হাজার একর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় হবিগঞ্জের সরিষা জমি গুলিতে সরিষা ফুল একটু পরে আসে। দেরিতে হলেও এখন শুরু হয়েছে মধু আহরণ। আর সরিষা থেকে মধু আহরণ করে পুরো হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মধুচাষি নিয়ামুল হক।
সরিষা ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, মৌমাছিরা বাক্স থেকে নির্দিষ্ট পথে বের হয়ে সরিষা জমির ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সের ভিতরে ফিরে যায়। মৌমাছির তাপ ও বাতাসের মাধ্যমে ৬-৭ দিন পর তা গাঢ় হয়ে মধুতে পরিণত হয়। এরপর মধু চাষিরা চাকের বাক্স খুলে চাকের ফ্রেম থেকে মেশিনের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করেন। সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা এসব মধু ৬শত টাকা থেকে ৭শত টাকা কেজি করে বিক্রি করা হয়। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফলন বাড়ে। এতে সরিষার ফুলে মৌমাছি যে পরাগায়ন ঘটায়, তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলনও বাড়ে। যে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি নেই, সেখানে সরিষার ফলন কম হয়। যতদিন পর্যন্ত সরিষায় ফুল থাকবে, ততদিন পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করবেন বলে জানালেন মধুচাষি নিয়ামুল হক।
সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এ মধু চাষে। এতে কৃষকরা একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেণ, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও হচ্ছে বেশি।
আর অল্প পুজিঁতে বিনিয়োগ করে সরিষা ক্ষেতে মধুর চাষ করার জন্য কৃষককে উৎসাহ দেয়ার কথা জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সহযোগীতা পাচ্ছেন বলে জানান নিয়ামুল।