আওয়ামী লীগে কারা কারা কোন্দলে জড়িত তাদের নাম চেয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কোন্দলে জড়িত নেতাদের নাম জানতে একটি কমিটিও করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ হয়েছেন বহু নেতা। কেউ কেউ ভোটে প্রার্থী না হলেও দলের প্রার্থীকে হারাতে কাজ করেছেন।
সব শেষ বৃহস্পতিবার ১৩৩টি এলাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে ভুগেছে আওয়ামী লীগ। যে ৫১টি এলাকায় ইউনিয়ন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে ভোট হয়েছে, তাকে আওয়ামী লীগ ৩২ এলাকায় জিতলেও বিএনপি জিতেছে ১২টিতে। তবে ১০টি এলাকায় জিতেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। আরও বেশ কিছু এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা হেরেছেন বিদ্রোহীদের কারণে।
শুক্রবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে দলের ভেতর বিদ্রোহী প্রার্থী এবং আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কোন্দলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সময় নেতাদেরকে বলেন, ‘কোন্দল সামাল দিতে না পারলে আগামী নির্বাচনে ভয়াবহ পরিণতি হবে আওয়ামী লীগের।’
ওই বৈঠকেই বিষয় শেখ হাসিনার কাছে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।
কোন্দল নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত শেখ হাসিনা
ওই বৈঠকেই আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কোন্দলের বিষয়টি তোলার সিদ্ধান্ত হয়। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ এই আলোচনার সূত্রপাত করেন।
এরপর পুরো বৈঠক জুড়ে দলের বিভিন্ন স্তরে কোন্দল নিরসনের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করেন প্রায় সকল কেন্দ্রীয় নেতা।
সব শুনে এক পর্যায়ে কোন্দল নিয়ে শেখ হাসিনা বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব নেতা ও সংসদ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে ভবিষ্যতে এই প্রতীক আর দেয়া হবে না।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা এমনও বলেন, ‘আরও বেশি করে গ্রুপিং করুক নেতারা।’
পরে দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে কোন্দলে জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিবেদন চান শেখ হাসিনা।
পাশাপাশী দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাকে প্রধান করে ও চার যুগ্ম সাধারণকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তারা দলীয় কোন্দল নিরসনে কাজ করবেন। তাদেরকে আগামী মে মাসে বার কাউন্সিল নির্বাচন দেখভাল ও তদারকির কাজ করতেও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয় সভায়।
সুপ্রিম কোর্ট বারে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে কমিটি
সভায় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ জানতে চান শেখ হাসিনা। এ সময় একাধিক নেতা এর পেছনেও কোন্দলকে দায়ী করেন। অনেক নেতাই এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
পরে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর নেতৃত্বে এই কমিটিতে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনার সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিপত্র পাওয়ায় শেখ হাসিনাকে দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয় সভায়।
গত ১৫ মার্চ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বীকৃতিপত্র দেয়ার পর ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীকে যে সংবর্ধনা দেয়া হয়, সেটি ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে দলীয়ভাবেও শেখ হাসিনার একটি সংবর্ধনা প্রাপ্য।
এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ, এস এম কামাল হোসেন সহ সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতারা কথা বলেন।
তবে কবে এই সংবর্ধনা দেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি সফরে লন্ডন, অস্টেলিয়া বিভিন্ন দেশে যাবেন। তবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিন এই সংবর্ধনা আয়োজনা করা হতে পারে বলেও সভায় আলোচনা হয়।
মের মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন চান শেখ হাসিনা
সভায় ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়েও কথা হয়। দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রসঙ্গটি তোলেন।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে গেছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির। তাদেরকে মার্চের মধ্যে সম্মেলন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি এতে নারাজ। তারা আগামী নির্বাচন অবধি পদ ধরে রাখতে চাইছে।
তবে আওয়ামী লীগের বৈঠকে শেখ হাসিনা মে মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই সম্মেলন করার নির্দেশ দেন।
মে মাসের ১১ তারিখ ছাত্রলীগের সম্মেলন করা যায় কী না এমন আলোচনা উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন, ছাত্রলীগকেই তারিখ নির্ধারণ করতে দিলে ভালো হয়।
ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, রোজার আগেই সম্মেলন হয়। কারণ মে মাসের ১৭ তারিখে রোজা শুরু।
‘ভোট চাওয়া আমার অধিকার’
বৈঠক শুরুর আগে গণমাধ্যমের সামনে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় ভোট চাওয়া নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দেন।
বিএনপির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে জনসভা করে সরকারের খরচে ভোট চাইছেন। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির লংঘন।
তবে শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের জনসভায় ভোট চাইছেন। এটি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার অধিকার। এ থেকে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকায় ভোট চাওয়া আমার অধিকার। কারণ আমি তো একটা দলের সভানেত্রী। কাজেই আমি যেখানেই যাব, অবশ্যই আমার দলের জন্য আমি ভোট চাইব। এটা আমার রাজনৈতিক অধিকার।’