ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করতে সচিবালয়ে যাচ্ছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে মন্ত্রী বৈঠকে বসবেন বলে সেতু বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওয়ালিদ ফয়েজ জানিয়েছেন।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মুখপাত্র হাসান আল মামুন বৈঠকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মামুন বলেন, “আমাদের মধ্যে থেকে ১০ জন ছেলে ও ১০ জন মেয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা বৈঠক করে এসে সিদ্ধান্ত জানাব। তার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে হাসান আল মামুন বাংলা একডেমির সামনে গিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অনুরোধ করেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেন পুলিশ আর টিয়ারশেল না ছোড়ে বা ধাওয়া না দেয়।
এরপর রাজু ভাস্কর্যের কাছে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে এসে তিনি বলেন, “আমরা পুলিশকে অনুরোধ করেছি আমাদের দিকে হামলা না চালাতে। আপনারাও পুলিশের দিকে কোনো ঢিল ছুড়বেন না।
“সেটা করলে আমরা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছি, আমাদের জীবন হুমকিতে পড়বে, আমাদের জীবনটা নষ্ট করবেন না। আপনারা সীমা অতিক্রম করবেন না। আমরা বৈঠক শেষে ফিরে এসে সিদ্ধান্ত জানাব। আপনারা ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।”
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। এর ধারাবাহিকতায় রোববার দুপুরে তারা শাহবাগে অবস্থান নিলে রাতে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়।
কিন্তু এরপর এরপর বিক্ষোভ আর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভ্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক ছাত্রী গভীর রাতে হল থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে থাকে। টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে রাতভর।
সকালে নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটা সাধারণ বিক্ষোভকারীদের হামলার ঘটনা ছিল না। ‘প্রশিক্ষিত’ হামলাকারীরা মুখোশ পড়ে এসেছিল ‘প্রাণনাশের’ জন্য।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা এক ব্রিফিংয়ে দাবি করে, উপাচার্যের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই হামলা চালিয়েছে বাইরের সন্ত্রাসীরা।
রোববার থেকে সারা দেশে অন্তত ৪০ জন আন্দোলনকারীকে পুলিশ আটক করেছে জানিয়ে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, তাদের মুক্তি দেওয়া না হলে বিকাল থেকে ‘সারা বাংলায় ছাত্র জনতার দাবানল জ্বলবে’।
রোববার রাতে সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ব্যপারে অবগত আছেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সোমবার বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার নির্দেশ দিয়েছেন।
তখন আন্দোলনকারীদের কোনো সাড়া পাওয়া না গেলেও সোমবার তাদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
ওই ব্রিফিংয়ের পর আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েলচত্বর, কার্জন হল, শহীদ মিনার,টিএসসি, শাহবাগ ঘুরে তারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
সূত্র, বিডিনিউজ২৪.কম