কুয়েতে করোনা পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অর্থাভাবে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ফের ব্যবসা চালু করতে প্রায় অক্ষম। অর্থাৎ পুঁজি হারাতে বসেছেন শত শত ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।
প্রায় দুই লাখেরও বেশি প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন।দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম এ খবরটি প্রকাশ করেছে।
এদিকে জনসংখ্যার কাঠামোর বৈষম্য নিরসনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত । দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কম অভিবাসী হওয়া উচিত, যা এখন মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ স্থানীয় নাগরিক এবং ৭০ শতাংশ অভিবাসী অনুপাতে রয়েছে এমন অভিমত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ।
কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৪৮ লাখ ( ৪.৮ মিলিয়ন ) , যার মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখ স্থানীয় নাগরিক এবং প্রায় ৩৪ লাখ অভিবাসী ।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, আদর্শ জনসংখ্যার কাঠামো কুয়েতি ৭০ শতাংশ এবং অভিবাসী ৩০ শতাংশ হওয়া উচিত।
অনদিকে, আরেকটি বিষয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি কুয়েত সরকার তার দেশ থেকে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে।
জানা গেছে, ওই খসড়া আইনে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য মাত্র ৩ শতাংশ কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে কুয়েতে বিভিন্ন পেশায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে যদি ৩ শতাংশ কোটা আইন কার্যকর হয়, তাহলে ২ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে কুয়েত ছাড়তে হবে।
কুয়েতের পাবলিক অথরিটি ফর সিভিল ইনফরমেশন এর বরাত দিয়ে স্থানীয় ইংরেজী দৈনিক আরব টাইমস জানায়, কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষ ষাটোর্ধ বয়সী বিদেশি নাগরিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ব্যতীত কাজের অনুমতি দেবে না।
প্রায় এক মাস আগে দেশটির সংশ্লিষ্ট জনশক্তি বিভাগ মেধাভিত্তিক এই নতুন অভিবাসন আইনটির কথা জানায়।
উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে ৯৭৬১২ জন প্রবাসীদের বয়স ৬০ বছর বা ষাটোর্ধ। এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক, কম শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অনেকের একেবারেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, ফলে তাদের চলমান আকামা শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী আকামা নবায়ন হবেনা।
২০২১ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে নতুন এই রেসিডেন্সি আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্থানীয় ওই দৈনিক আরো জানায়, ১৫৫০২ জন প্রবাসী রয়েছেন, তারা সবাই ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী।
৯৯৭২০ জন বেদুইনদের কাছে রয়েছে ডিপ্লোমা সনদ। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেটধারী ২৭৯০৪৫ জন প্রবাসী রয়েছেন।
ষাটোর্ধ ”সাধারণ শ্রমিক” প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা কম হলেও, প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি।
ধারণা করা হচ্ছে কুয়েতে সবচেয়ে বেশি ষাটোর্ধ মিশরীয় নাগরিক।
তবে বাংলাদেশী যারাই এখানে আছেন, এদের অধিকাংশ’ই বিভিন্ন ব্যবসায় নিয়োজিত।
এদিকে করােনা মহামারির কারণে লাখ লাখ কুয়েত প্রবাসী আটকে পড়েছেন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । কুয়েতের আকামা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৭১।
কুয়েতের বাইরে থাকা বা ছুটিতে দেশে গিয়ে আটকে পড়া শুধুমাত্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।
এ পরিস্থিতিতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশে আটকে পড়া কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশেষ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার টিবি হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সী কুয়েত প্রবাসী আবু সাইদ কুতুব উদ্দিন প্রায় ৪০ বছর ধরে কুয়েত আছেন।
তিনি বলেন, কুয়েতে ব্যবসা করে ব্যক্তি জীবনে অনেক অর্জন করেছি। যদিও চাচ্ছিলাম শীঘ্রই কুয়েত ছাড়বো, কিন্তু নতুন অভিবাসন আইন অনেকটাই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।
আবু সাইদ বলেন, সবাইকে কুয়েত ছাড়তে হবে এটা নিশ্চিত। তবে এখান থেকে সবকিছু গুটিয়ে যাওয়ার আগে মোটামুটি প্রস্তুতির দরকার।
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে কুয়েত ছাড়তে গেলে আমি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
নোয়াখালী জেলা, লক্ষ্মীপুর উপজেলার আব্দুল্লা পুর গ্রামের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ বয়সী জালাল আহমেদ। প্রায় ২০ বছর ধরে কুয়েতে একটি কোম্পানির অফিস কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, কুয়েত আসার পর থেকে কখনোই ভালো বেতনে কাজ করিনি।
এ অবস্থায় চার মাসেরও বেশি সময় লকডাউন থাকাকালীন কোম্পানী একেবারেই বেতন দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে কুয়েত ছাড়তে হলে নিঃস্ব হাতেই দেশে যেতে হবে।
সম্পাদকীয়- আ হ জুবেদ