Menu |||

কুয়েত কথন- ৯

অসুখ বিসুখ করলে কুয়েতবাসী ভারত বা আমেরিকা যায়। কুয়েতে চকচকে ঝলমলে হাসপাতাল আছে বটে, যথেষ্ট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকও আছেন। কিন্তু এদের নিজেদেরই আপন দেশের চিকিৎসার মান নিয়ে সংশয় আছে। কারণটা বুঝিনা।

প্যানাডল নামক প্যারাসিটামল আরবের জাতীয় ওষুধ। গা ম্যাজম্যাজ, মাথা টনটন, নাক সুরসুর, পা কনকন, বুক ধড়ফড়, দেহ ঝিমঝিম মোটামুটি সবেতেই দুদিন দুটো করে প্যানাডল ঠুকে দিলে আপৎকালীন নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

আমার আর ছেলের রেসিডেন্সির সময় ভারতে আমার মেডিক্যাল টেস্ট কলকাতায় মিটে গেলেও কি এক দুর্বোধ্য কারণে ছেলের রক্ত পরীক্ষার সিট পড়ল দিল্লীতে। সে কি ঝকমারি। দিল্লীতে দশদিন ধরে হোটেলে থেকে ছেলের বাপ ঠাকুর্দা চোদ্দ পুরুষের রক্ত-মল-মূত্র-ঘর্ম এবং মাথা বুক পেট ( হ্যাঁ , পেটে কৃমি আছে কি না) আরও উল্লেখ-অযোগ্য পরীক্ষাবলী শেষে তিনি কুয়েতে গিয়ে পরীক্ষা দেবার যোগ্য প্রমাণিত হলেন। আমিও নিশ্চিত হলাম মানুষ নয়, নির্ঘাৎ এলিয়েনের জন্ম দিয়েছি।

কুয়েতে গিয়ে আবার সেই সমস্ত একই পরীক্ষা নিরীক্ষা। ওদের যন্ত্রপাতিগুলো কিন্তু বেশ নয়নমনোহর। মানে রংচঙে সিরিঞ্জ। কটকটে করে হাত বাঁধার রবারের দড়িটাও একেক জনের একেক রঙের ।

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে রেখে ফুরফুর করে শ্বাস ছাড়ার পরীক্ষায় আমি প্রথমে ফেল করেছিলাম। ছেলে এক চান্সেই পাস্ ; প্রতিভাধর কি না। পরের বার কদিন ইউটিউবে রামদেব বাবাজীর ক্লাশ করে খালি পেটে গিয়ে পুরো প্রাণায়ামের ঢঙে শ্বাস নিয়ে ওদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ভাবল ওদের শুষ্ক মরুবাতাস সবই আমি ফোঁস করে টেনে নিলাম হয়তো।

কুয়েতে ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের ভিসিট ভিসা পাওয়া এখন বেশ কঠিন। এর আগে আমার বাবা কি শাশুড়িমার ভিসা পেতে সমস্যা হয়নি। এবার অনেক চেষ্টায় পাওয়া গেল। এই কঠোরতার কারণ অবশ্য আমরাই। কুয়েতে রেসিডেন্ট এবং তাঁর ডিপেন্ডেন্টদের যাবতীয় চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা খরচে হয়ে থাকে। এই সুযোগের অসদ্ব্যবহার করে বাবা মা রা কুয়েত বেড়াতে গেলে অনেকেই দুতিন দিনের জন্য রাজকীয় হাসপাতালে মহাসুখে রেখে ফুল বডি চেকআপ করাতে শুরু করে দিল। প্যাথোলজি থেকে ইকো, ইসিজি, টিএমটি, মহিলাদের বাড়তি পরীক্ষা, হয়ত সিটি স্ক্যানও এই আওতায় পড়ে। ফলে বয়স্কদের ভিসা দেওয়া এক্কেবারে বন্ধই হয়ে যায়। এখন আবার একটু একটু করে নিয়মের শিথিলতা আসছে।

আমরা যেমন একঘেয়েমি কাটাতে এক দুদিনের জন্য ডায়মন্ড হারবার কি টাকি কি দীঘা যাই, কুয়েতিরা অমনই যায় মাসকাট, দুবাই, জর্ডন কি জার্মানী। প্লেনেও যায়, গাড়ি চালিয়েও যায়।

এছাড়া এক দু বেলার জন্য দেশের মধ্যেই সমুদ্রের ধারের রিসর্টে থেকে আসে। আজকাল আমরাও অমন রিসর্টে একটু রিল্যাক্স করে আসি। এমনিতে তো গরমের জন্য সমুদ্রের ধারে যাওয়া যায়না। গত দুবছর অল্প শীতে আমরা দিন দুয়েক করে সাগর সৈকতে থেকেছিলাম ।

সমুদ্র আর তার বিচ থাকলেও সমুদ্রে স্নান করার চল এখানে কেন নেই জানিনা। শান্ত সমুদ্র। উত্তাল ঢেউও নেই যে কোন বিপদ হবে। রিসর্ট গুলোর নিজস্ব বিচে বসা বা রোদ পোহানোর ভালোই ব্যবস্থা থাকে। তাই বলে গোয়া বা থাইল্যান্ডের ঢালাও উদার কালচারের সঙ্গে একেবারেই গুলিয়ে ফেলা চলবেনা।

আগেও বলেছি মহিলাদের পোশাক নিয়ে কোন কড়াকড়ি কুয়েতে নেই। মহিলা পুরুষ সবাই স্বেচ্ছায় বোরখা এবং ডিসডাসা পরেন। শুক্রবার কুয়েতে ফ্যামিলি ডে। সেদিন অনেকেই বোরখা ছাড়া ঘোরেন। তবে মাথায় হিজাব থাকেই।

ফ্যামিলি ডে তে ওয়াটার পার্কে মহিলা সাথী ছাড়া পুরুষরা প্রবেশাধিকার পাননা। মহিলারা একা বা দলবেঁধে যেতে পারেন। একজন সঙ্গিনী নিয়ে একাধিক পুরুষ শুক্রবার ওয়াটার পার্কে ঢুকতে পারবেননা। উল্টোটা হতে পারে। আবার অসম বয়সী মানে বাবা আর মেয়ে এমন কম্বিনেশনও ঐ দিন চলবেনা। কিন্তু মা এবং শিশু বা কিশোর পুত্র চলবে। অন্যদিন মহিলারা গেলে আপন দায়িত্বে যাবেন ; সেসব দিনে কোন অপ্রীতিকর বা অসম্মানজনক ঘটনা ঘটলে কর্ত্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

নারীবাদী উগ্র আধুনিকরা কিছু মনে করবেননা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই সমস্ত নিয়মগুলো বেশ পছন্দ করি। এই ধরণের কিছু সাবধানতা আইন করে আমাদের দেশেও থাকলে আজ মহিলারা অনেকাংশেই সুরক্ষিত থাকতে পারতেন ; ছেলেরাও ছোট থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই নিজের এবং অপরের পরিবারের মহিলাদের সম্ভ্রম করা মজ্জাগত করে ফেলত। ফেসবুকে প্রোফাইল ফটোর জায়গাটা মাঝেমাঝেই ধিক্কারে কালো করার দরকার হতনা হয়ত।

 

 

লেখক:
গার্গী চক্রবর্তী (ভারত)
চলবে……

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

কুয়েত কথন- ৯

অসুখ বিসুখ করলে কুয়েতবাসী ভারত বা আমেরিকা যায়। কুয়েতে চকচকে ঝলমলে হাসপাতাল আছে বটে, যথেষ্ট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকও আছেন। কিন্তু এদের নিজেদেরই আপন দেশের চিকিৎসার মান নিয়ে সংশয় আছে। কারণটা বুঝিনা।

প্যানাডল নামক প্যারাসিটামল আরবের জাতীয় ওষুধ। গা ম্যাজম্যাজ, মাথা টনটন, নাক সুরসুর, পা কনকন, বুক ধড়ফড়, দেহ ঝিমঝিম মোটামুটি সবেতেই দুদিন দুটো করে প্যানাডল ঠুকে দিলে আপৎকালীন নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

আমার আর ছেলের রেসিডেন্সির সময় ভারতে আমার মেডিক্যাল টেস্ট কলকাতায় মিটে গেলেও কি এক দুর্বোধ্য কারণে ছেলের রক্ত পরীক্ষার সিট পড়ল দিল্লীতে। সে কি ঝকমারি। দিল্লীতে দশদিন ধরে হোটেলে থেকে ছেলের বাপ ঠাকুর্দা চোদ্দ পুরুষের রক্ত-মল-মূত্র-ঘর্ম এবং মাথা বুক পেট ( হ্যাঁ , পেটে কৃমি আছে কি না) আরও উল্লেখ-অযোগ্য পরীক্ষাবলী শেষে তিনি কুয়েতে গিয়ে পরীক্ষা দেবার যোগ্য প্রমাণিত হলেন। আমিও নিশ্চিত হলাম মানুষ নয়, নির্ঘাৎ এলিয়েনের জন্ম দিয়েছি।

কুয়েতে গিয়ে আবার সেই সমস্ত একই পরীক্ষা নিরীক্ষা। ওদের যন্ত্রপাতিগুলো কিন্তু বেশ নয়নমনোহর। মানে রংচঙে সিরিঞ্জ। কটকটে করে হাত বাঁধার রবারের দড়িটাও একেক জনের একেক রঙের ।

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে রেখে ফুরফুর করে শ্বাস ছাড়ার পরীক্ষায় আমি প্রথমে ফেল করেছিলাম। ছেলে এক চান্সেই পাস্ ; প্রতিভাধর কি না। পরের বার কদিন ইউটিউবে রামদেব বাবাজীর ক্লাশ করে খালি পেটে গিয়ে পুরো প্রাণায়ামের ঢঙে শ্বাস নিয়ে ওদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ভাবল ওদের শুষ্ক মরুবাতাস সবই আমি ফোঁস করে টেনে নিলাম হয়তো।

কুয়েতে ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের ভিসিট ভিসা পাওয়া এখন বেশ কঠিন। এর আগে আমার বাবা কি শাশুড়িমার ভিসা পেতে সমস্যা হয়নি। এবার অনেক চেষ্টায় পাওয়া গেল। এই কঠোরতার কারণ অবশ্য আমরাই। কুয়েতে রেসিডেন্ট এবং তাঁর ডিপেন্ডেন্টদের যাবতীয় চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা খরচে হয়ে থাকে। এই সুযোগের অসদ্ব্যবহার করে বাবা মা রা কুয়েত বেড়াতে গেলে অনেকেই দুতিন দিনের জন্য রাজকীয় হাসপাতালে মহাসুখে রেখে ফুল বডি চেকআপ করাতে শুরু করে দিল। প্যাথোলজি থেকে ইকো, ইসিজি, টিএমটি, মহিলাদের বাড়তি পরীক্ষা, হয়ত সিটি স্ক্যানও এই আওতায় পড়ে। ফলে বয়স্কদের ভিসা দেওয়া এক্কেবারে বন্ধই হয়ে যায়। এখন আবার একটু একটু করে নিয়মের শিথিলতা আসছে।

আমরা যেমন একঘেয়েমি কাটাতে এক দুদিনের জন্য ডায়মন্ড হারবার কি টাকি কি দীঘা যাই, কুয়েতিরা অমনই যায় মাসকাট, দুবাই, জর্ডন কি জার্মানী। প্লেনেও যায়, গাড়ি চালিয়েও যায়।

এছাড়া এক দু বেলার জন্য দেশের মধ্যেই সমুদ্রের ধারের রিসর্টে থেকে আসে। আজকাল আমরাও অমন রিসর্টে একটু রিল্যাক্স করে আসি। এমনিতে তো গরমের জন্য সমুদ্রের ধারে যাওয়া যায়না। গত দুবছর অল্প শীতে আমরা দিন দুয়েক করে সাগর সৈকতে থেকেছিলাম ।

সমুদ্র আর তার বিচ থাকলেও সমুদ্রে স্নান করার চল এখানে কেন নেই জানিনা। শান্ত সমুদ্র। উত্তাল ঢেউও নেই যে কোন বিপদ হবে। রিসর্ট গুলোর নিজস্ব বিচে বসা বা রোদ পোহানোর ভালোই ব্যবস্থা থাকে। তাই বলে গোয়া বা থাইল্যান্ডের ঢালাও উদার কালচারের সঙ্গে একেবারেই গুলিয়ে ফেলা চলবেনা।

আগেও বলেছি মহিলাদের পোশাক নিয়ে কোন কড়াকড়ি কুয়েতে নেই। মহিলা পুরুষ সবাই স্বেচ্ছায় বোরখা এবং ডিসডাসা পরেন। শুক্রবার কুয়েতে ফ্যামিলি ডে। সেদিন অনেকেই বোরখা ছাড়া ঘোরেন। তবে মাথায় হিজাব থাকেই।

ফ্যামিলি ডে তে ওয়াটার পার্কে মহিলা সাথী ছাড়া পুরুষরা প্রবেশাধিকার পাননা। মহিলারা একা বা দলবেঁধে যেতে পারেন। একজন সঙ্গিনী নিয়ে একাধিক পুরুষ শুক্রবার ওয়াটার পার্কে ঢুকতে পারবেননা। উল্টোটা হতে পারে। আবার অসম বয়সী মানে বাবা আর মেয়ে এমন কম্বিনেশনও ঐ দিন চলবেনা। কিন্তু মা এবং শিশু বা কিশোর পুত্র চলবে। অন্যদিন মহিলারা গেলে আপন দায়িত্বে যাবেন ; সেসব দিনে কোন অপ্রীতিকর বা অসম্মানজনক ঘটনা ঘটলে কর্ত্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

নারীবাদী উগ্র আধুনিকরা কিছু মনে করবেননা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই সমস্ত নিয়মগুলো বেশ পছন্দ করি। এই ধরণের কিছু সাবধানতা আইন করে আমাদের দেশেও থাকলে আজ মহিলারা অনেকাংশেই সুরক্ষিত থাকতে পারতেন ; ছেলেরাও ছোট থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই নিজের এবং অপরের পরিবারের মহিলাদের সম্ভ্রম করা মজ্জাগত করে ফেলত। ফেসবুকে প্রোফাইল ফটোর জায়গাটা মাঝেমাঝেই ধিক্কারে কালো করার দরকার হতনা হয়ত।

 

 

লেখক:
গার্গী চক্রবর্তী (ভারত)
চলবে……

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।