মোহাম্মদ আবদুর রউফ মাওলাঃ কুয়েতে লা-মানা ভিসা চালু হয়েছে সম্ভবত ২০১৪ ইং সালের মে মাসে। আল জাল-জালা কোম্পানী ১ম ২০০ জন কর্মীর ভিসা পেয়ে এ যাত্রার উদ্ভোধন করে। এর পূর্বে বিগত ৭ বৎসর কুয়েতে বাংলাদেশীদের সবধরনের ভিসা বন্ধ ছিল। কুয়েতে এই লা-মানা ভিসা চালু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশী যারা ভিসা কিনে কুয়েতে কর্ম নিয়ে প্রবেশ করেছে তাদের কপালে দিনে দিনেই দুর্ভোগ-দুরগতি বেড়েই চলেছে। শুধু লাভবান হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানীকারী কিছু অসাধু ও সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি। বর্তমানে চরম দামে একটি ভিসা কিনে কুয়েতে এসে এত কম বেতনে চাকরি করে কেউ হিসেব মেলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ভিসা চালু হওয়ার পর থেকেই কুয়েতের সচেতন বাংলাদেশী সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদরা এর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। এর মধ্যে প্রকৌশলী ফকরুল ইসলাম ফারুখ, প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আবদুল হান্নান, রফিকুল ইসলাম ভুলু, আবদুর রউফ মওলা, আ.হ. জুবেদ, নজরুল ইসলাম জহির, কবি বেলাল আহমেদ, কবি আঃ মালেক, কবি মোঃ রহিম, কলামিষ্ট আলী আজম প্রমুখ।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় ও কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা পূর্বেও কুয়েতের অবৈধ রিক্রুটিং এজেন্ট বা ভিসা ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্বের বেড়াজালে পড়ে কিভাবে সাধারণ শ্রমিক কুয়েতে এসে ভুক্তভোগী হচ্ছে তা অবহিত করেছি। এ ব্যপারে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অবৈধ আদম ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে সাধারণ শ্রমিকদের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে কুয়েতের বিশিষ্ট সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ, ও অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।
অনেক বছর ভিসা বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের সাধারণ শ্রমিক এসে কুয়েতের শ্রম বাজার ভারী হচ্ছে বটে কিন্তু আসার পরপরই বহু শ্রমিক অবৈধ হয়ে যাচ্ছে আকামা না লাগানোর কারনে। কুয়েতে আসার পর তাদের চুক্তি অনুযায়ী চাকরি দেয়া হয় না অনেক কোম্পানীতেই। তাছাড়া আবাসন পরিবেশ অত্যন্ত নিম্ন মানের। শ্রমিকদের এসব নানাবিধ ব্যপার নিয়ে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম-বিভাগ সুষ্ঠ তদন্ত করলে এ রকম আরও অবৈধ আদম ব্যবসায়ীদের কীর্তিকলাপের করুন ইতিহাস বেরিয়ে আসবে। আমরা আশাকরি কুয়েতে বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার চাঙ্গা রাখার জন্য অবৈধ আদমব্যবসায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে প্রতিহত করার জন্য দূতাবাসের অগ্রনী ভুমিকা পালন করা প্রয়োজন।
লা-মানা ভিসা হল বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে কোম্পানীর নির্ধারিত কোঠার অনুকূলে ভিসা বের করা। বিশেষ তদবিরের উপর এসব ভিসার পরিমানও কমবেশি হয়ে থাকে। এ লা-মানা ভিসা কিনে সব মিলিয়ে কুয়েতে আসা পর্যন্ত একজন শ্রমিকের খরচ হয় ৭ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকার মধ্যে। এ বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করে এসে একজন শ্রমিক বেতন পায় ৬০ কুয়েতি দিনার অথবা কোন কোন কোম্পানীতে ৮০ কুয়েতি দিনার। এর মধ্যে বাসস্থান খরচ ফ্রি হলেও খাওয়া-দাওয়া নিজের। একজন শ্রমিকের আনুসাংগিক বিভিন্ন খরচ বাদদিলে ৬০ দিনার থেকে ৩০ দিনার এবং ৮০ দিনারের মধ্যে থেকে ৫০দিনারের বেশি জমানো সম্ভব নয়- যা আনুপাতিক হারে ৩০দিনারে বাংলাদেশী টাকায় ৭ হাজার ৭ শত টাকা এবং ৫০ দিনারে ১২ হাজার ৯ শত টাকা হয় (প্রতি হাজার টাকায় ৩.৮৫০ দিনার হিসেবে)। দেশ থেকে আসা টগবগে তরুন সোনার ছেলেরা বুঝতে না পারলেও কুয়েতে পা রেখেই বুঝতে পারে কি শুভংকরের ফাঁদে ওদের জীবন আবদ্ধ হল। অনেকেই জায়গা জমি বিক্রয় করে, ধারকর্য করে অথবা মা’র স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে ভিসা বাবদ খরচ হওয়া এ বিপুল পরিমান অর্থ জোগান দিতে দিশেহারা হয়ে হিসেব মেলাতে পারেনা। তাছাড়া, কোম্পানীর কন্ট্রাক্ট না থাকলে বা সুবিধামত কন্ট্রাক্ট না পেলে শ্রমিকদের বাসস্থানে বসে মাসের পর মাস বেতন ছাড়া বেকার জীবন-যাপন করতে হয়। অগাষ্ট ২০১৬ শেষ সপ্তাহে ১০০ জনের মত শ্রমিক কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে তাদের নিয়োগকৃত কোম্পানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে এসেছে। দূতাবাস ওদের প্রতি কতটুকু যত্নবান হবেন তা ই দেখার বিষয়।
কুয়েতসহ আরও বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানীর ব্যপারে আদমব্যবসায়ী চক্রের প্রতারনা দূতাবাস সহ আমাদের সবারই কমবেশি জানা। যে সব দুষ্ট চক্র বা ব্যক্তিবর্গ অথবা কোম্পানীর এহেন অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। আমরা মনেকরি, সরল কথা বলে যারা মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে খেলা করে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যপারে প্রতারনামূলক ভাবে অর্থ উপার্জন করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া আবশ্যক। এসব ব্যপারে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলি, প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের সাথে সমন্বয় সাধন করে যারা প্রতারনার অপচেষ্টায় জড়িত তাদের লিষ্ট তৈরী করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসতে পারে- তদ্রুপ ব্যবস্থা নিতে পারে হুন্ডি ব্যবসায় জরিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে- যাদের কারণে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে।
পরিশেষে বলতে চাই, কুয়েতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পূর্বের মত আবারও দুতাবাস ভাংচুর না হউক এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ দূতাবাসেরই নিতে হবে।