অনুভূতি ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্যে বর্তমান বিশ্বের অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের এই স্বর্ণ যুগে ফেসবুক একটি অত্যাধুনিক ও অনন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, একথা নিঃসংকোচে স্বীকার করতেই হয়।
তবে ফেসবুক ব্যবহার কারীদের ইতিবাচক অর্জন এবং নেতিবাচক প্রভাব, নৈতিক অধঃপতন এসব নিয়ে আর কজন’ই বা ভাবেন।
ফেসবুক আমাদের কতটুকু প্রযুক্তি সুবিধা দিচ্ছে, সে হিসেবটাও সবার রাখা উচিত। প্রকৃত সত্য হচ্ছে ফেসবুক মূল ইউজার ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়েসী ছেলেমেয়েরা। ৩৫ বছরের উপরের মানুষজনের ফেইবুক আসক্তি খুবই কম। বিভিন্ন জরিপে এটা স্পষ্ট যে এই বিশেষ বয়েসী মানুষদের কাছে ফেসবুকের রয়েছে অত্যন্ত বেশীমাত্রার জনপ্রিয়তা।
ফেসবুক আজ অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম, গণজোয়ার আর জনস্রোতের মাধ্যম। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই দিন দিন অতি আসক্ত হয়ে পড়ছে ফেসবুকের প্রতি। আর এই আসক্তির সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসৎ মানুষ। জন্ম হচ্ছে নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে মোট ফেসবুক প্রোফাইলের প্রায় ৯% ফেইক। এর মধ্যে বাংলাদেশে এই সংখ্যা আরো বেশী। অনেকেই ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল খুলে নিজেদের নাম পরিচয় বদলে প্রেমের প্রতারণা, অর্থ প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল ও ব্যক্তি বিশেষকে হেয় প্রতিপন্ন সহ নানান অপরাধ করছে।
ফেসবুক নিয়ে বিশাল কিছু লেখার ইচ্ছে আমার একেবারেই নেই,তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষ করে কুয়েত প্রবাসীদের ভীষণ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
সম্প্রতি কুয়েতে নামে বেনামে প্রচুর ভুয়া ‘ফেইক’ ফেসবুক আইডি প্রকৃত ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরকে চরম বিব্রত, অতিষ্ঠ করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে বসবাসরত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্রীড়া সংগঠন সহ সকল শ্রেণী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
কুয়েতে হঠাৎ করে ভুয়া ফেসবুক আইডির অধিক ছড়াছড়ির কারণ সম্পর্কে, কুয়েত আওয়ামীলীগ একাংশের সাবেক সভাপতি, মাসিক মরুলেখার সম্পাদক আব্দুর রউফ মাওলাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কুয়েতে বিভিন্ন নামে ফেইক ফেসবুক আইডি হচ্ছে, এটি আমি স্বীকার করছি।
আসলে এর কারণ যাইহোক, তবে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এই কাজটি করছে, এদের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ কুয়েতে আছে। ওরা শুধু কুয়েতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে’ই না, মোটকথা গোটা বাংলাদেশী কমিউনিটিকে কুলষিত করছে।
সুতরাং, এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার শেষ অংশে একথা যোগ করেন আব্দুর রউফ মাওলা।
তরুণ সাংবাদিক ও সংগঠক এস,এম, আব্দুল আহাদ এসম্পর্কে বলেন, আমি ফেইক ফেসবুক আইডির চরম বিরোধী, এমনকি, গত দু’দিন আগেও এনিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস করেছি।
আর এই ভুয়া ‘ফেইক’ ফেসবুক আইডি যারা বা যে তৈরি করে আমি বরাবরই বলে থাকি যে, তারা নিশ্চয় পিতৃ পরিচয়হীন।
এস,এম,আব্দুল আহাদ আরো বলেন, এই ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরির কারণে, এখন সঠিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, কারণ মানুষ এখন আর ফেসবুকের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারছেনা।
কুয়েতে গাজি টিভির প্রতিনিধি মোহেন আহমেদ লিটন ফেইক ফেসবুক আইডি সম্পর্কে বলেন, আসলে এসব কাজ দুর্বল প্রকৃতির মানুষদের।
এরা নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করে, ভুয়া পরিচয়ে অন্যদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে চলেছে।
কুয়েতে সম্প্রতি এই ভুয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে।
মোহেন আহমেদ লিটন আরো বলেন, আমি এইসব ভুয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। এরা নিশ্চয় আমাদের কাছে ঘৃণিত মানুষ।
অনেকে নানান কথা বলেছেন এই ভুয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে। কেউ বলেছেন, এদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হোক, আবার কেউ বলেছেন, এদেরকে সনাক্ত করে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হাতে সোপর্দ করা হোক।
কুয়েতে বাংলাদেশী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনীতিবিদদের, রাজনীতি চর্চা করার অতি পরিচিত একটি ঠিকানা, কুয়েত সিটিস্থ গুলশান হোটেল ও রাজধানী হোটেল।
সম্প্রতি এদুটি হোটেলে গিয়ে জানাগেছে, কুয়েতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আসন্ন কাউন্সিল উপলক্ষে প্রতিদিন’ই আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের আড্ডা জমে উঠেছে, হোটেল ব্যবসায় যোগ হচ্ছে মোটা অংকের টাকা, পাশাপাশি রাজনৈতিক আলাপ- আলোচনায়ও বেস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে সংগঠনটির নেতা কর্মীদেরকে।
এদুটি হোটেলেও লক্ষ করা গেছে অনেকে বলছেন, কুয়েতে সাম্প্রতিক ফেইক ফেসবুক আইডির অধিক ছড়াছড়ির কথা।
ভুয়া ফেসবুক আইডির হঠাৎ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে অনেকের সঙ্গে কথা বলে ও ব্যাপক পর্যালোচনা করে দেখাগেছে যে, এটি কুয়েত আওয়ামীলীগ এর কাউন্সিল ঘোষণার পর থেকেই লক্ষণীয় ভাবে বেড়ে যায়, যেটি পূর্বে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি।
অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুয়েত’র কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থীদের সমর্থক গোষ্ঠী দ্বারাই ভুয়া ফেসবুক কুয়েতে তৈরি হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
দেখাগেছে, এই ভুয়া ফেসবুক আইডিকে কেউ ব্যবহার করছেন ভয়ানক অস্ত্র হিসেবে, আবার কেউ ব্যবহার করছেন প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে হেয় প্রতিপন্ন ও ঘায়েল করার ক্ষেত্রে।
সঠিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আকাংখা, মানসম্মত, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি পরিবেশ ফিরে আসুক এই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে, বন্ধ হোক অসৎ, দুশ্চরিত্র মানুষদের ভুয়া ফেসবুক তৈরিকারীদের উপদ্রব।