নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ- সকল বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া সত্ত্বেও ৩২৭ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা যাচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষ এসব জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার সর্বশেষ প্রক্রিয়া শুরু বা শেষ না করায় রায় কার্যকরের বিষয়টি ঝুলে আছে। দেশের ৬৮ কারাগারে এখন এক হাজার ১৪৭ জন জঙ্গি রয়েছে যারা নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। এরমধ্যে কিছু মৃত্যুদণ্ডাদেশ উচ্চ আদালতে আপীলে আটকে আছে। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার একটি কমিটি গঠন করেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শনিবার বলেন, ইতিমধ্যে পুরো ঘটনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো কারণে আদালতের দেয়া রায় বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হয়েছে বা হচ্ছে সেটিও দেখা হবে। তিনি বলেন, জঙ্গি কিংবা সাধারণ অপরাধী সে যেই হোক আদালতের রায় বাস্তবায়নে কারো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের গাফিলতি বরদাশত করা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিলম্বের কী কারণ সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। কেন নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ আপীলে আটকে আছে তাও পর্যালোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা-পরিদপ্তরকে জরুরিভাবে জানাতে বলা হয়েছে কেন এসব জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে না। তা ছাড়া দেশের কোনো কারাগারে কতজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি বা আসামি রয়েছে তার বিবরণও দিতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে কারা পরিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ফাঁসির আসামির সংখ্যা জানিয়েছে। তবে সকল বিচারিক কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ফাঁসি কী কারণে বিলম্বিত হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। কারা পরিদপ্তর যে তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে তা থেকে জানা যায়, এক হাজার ১৪৭ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে আছে। নিম্ন আদালতের দেয়া মৃতুদণ্ডাদেশ উচ্চ আদালতে আপীল প্রক্রিয়ায় ঝুলে গেছে। তবে ৩২৭ জন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নেই কারা পরিদপ্তরের প্রতিবেদনে। পুরো বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্মৃতি রানী ঘরামীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের আদেশ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে জানার জন্য ফোনে চেষ্টা করেও আইজিকে (প্রিজন) পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে স্মৃতি রানী ঘরামী গতকাল বলেন, ৩২৭ সংখ্যাটি নিয়ে কারা পরিদপ্তরের ভিন্নমত আছে। কারা পরিদপ্তরের বক্তব্য এতো সংখ্যক ফাঁসির আসামিকে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার প্রক্রিয়ায় আটকে রাখা সম্ভব নয়। কারা পরিদপ্তরের বক্তব্যে সংশয়মুক্ত নন স্মৃতি। তিনি জানান, কারা কর্তৃপক্ষকে পুনরায় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দ্রুতই কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, কিছু মামলা হাইকোর্টে, কিছু আপীল বিভাগে ঝুলে আছে। এ বিষয়ে সরকারি আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের বিষয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি যাতে না থাকে সেটি নিশ্চিত করাই হবে কমিটির মূল দায়িত্ব।