আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাতার সঙ্কট দুই সপ্তাহ পার হতে চলেছে। কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের অারোপ করা অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল। ভুক্তভোগী হচ্ছে কোটি মানুষ। একই সাথে কাতারি ও আশপাশের দেশের সাধারণ মানুষ।
আর এই সঙ্কটে আড়ালে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসছে ইসরাইল। মুসলমানদের মধ্যে বিরোধের সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করে নিচ্ছে ইহুদীবাদী রাষ্ট্র। ইসরাইলের চিরশত্রু ইরানকে দুর্বল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদী প্রভাবিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানকে দুর্বল করতে প্রয়োজন মধ্যপ্রাচ্যের বাকি মুসলিম দেশের কাছ থেকে এই দেশকে পুরোপুরি একঘরে করা। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
ইরানের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি ও আমেরিকান আধিপত্যের বিরুদ্ধে আরেকটি জোরালো শক্তি হচ্ছে মুসলমি ব্রাদারহুড। গাজা উপত্যকায় ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে হামাস। এই শক্তিগুলোকে দুর্বল করা চাই-ই চাই আমেরিকা-ইসরাইলের।
আর ব্রাদারহুড-হামাসকে একচেটিয়া সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক ও কাতার। তুরস্কে ক্ষমতাসীন এরদোগান সরকারকে সরানোর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক ক্যু’সহ নানা চেষ্টা করেছে আমেরিকা ও ইসরাইল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সফল হতে পারেনি।
তাই এখন চোখ দিয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট রাষ্ট্র কাতারের ওপর। কাতারকে ঘায়েল করে ফেলতে পারলে তুরস্ক আরও একা হয়ে পড়বে। তখন নতুনভাবে হামলে পড়া যাবে দেশটির ওপর। পরিকল্পনা এভাবেই নিয়ে আগাচ্ছে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা।
আর সেই পরিকল্পনায় নেপথ্যে নায়ক হিসেবে কাজ করছেন সৌদি আর আমিরাতে দুই যুবরাজ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের তরুণ পুত্র মোহাম্মাদ বিন সালমান এখন দেশটির ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স। সৌদি রাজপরিবারের সর্বেসর্ব এখন তিনি। তার পরবর্তী চোখ বাপের গদিতে। সৌদি বাদশাহ হওয়ার খায়েশ এখনই নাকি প্রকাশ করেন তিনি নির্দ্বধায়। খায়েশ পূর্ণ করতে যে কোনো কিছু করতে রাজি মোহাম্মদ বিন সালমান। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক এক সাংবাদিক সম্প্রতি একটি কলামে লিখেছেন, বাদশাহ হওয়ার খায়েশ পূর্ণ করতে নিজের বাবাকেও বিক্রি করতে রাজি হবেন এই যুবরাজ।
ইসরাইলের জন্য তাই সালমানের পুত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা সহজ হয়েছে। পরবর্তী বা তার পরবর্তী বাদশাহ হতে আমেরিকার সমর্থন নিশ্চিত করা, এবং সৌদি চিরশত্রু ইরান ও ব্রাদারহুডকে দমিয়ে রাখার শর্তে ইসরাইলের ছক অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্য সাজাতে দিতেও আপত্তি নেই মোহাম্মদ বিন সালমানের। কাতার সঙ্কটে এই বিষয়টিই কাজ করছে সৌদির সিদ্ধান্তের পেছনে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরেক যুবরাজ এবং বর্তমান ক্রাউন্স প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানও। এই ব্যক্তিও উচ্চাবিলাসী তার দেশের পরবর্তী আমির হওয়ার ব্যাপারে। বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনারের জানাচ্ছেন, আমিরাতের যুবরাজ তার কাছে বলেছেন, ব্রাদারহুড হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অস্তিত্বের হুমকি।
আমিরাতের যুবরাজ অবশ্য ঠিক বলেছেন। তার মতো ইসরাইলের অনুগত শাসকদের অস্তিত্ব বিলিন করতেই কাজ করে যাচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুড।
মোহাম্মদ বিন জায়েদও নিজের ক্ষমতায় যেতে সহায়তার বিষয়ে ইসরাইলের সাথে পাকাপাকি সমঝোতার পর এখন ইরান ও ব্রাদারহুড এবং তাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে লেগেছেন। ইরান, ব্রাদারহুড এবং কাতার-তুরস্কের মতো দেশগুলো না থাকলে বা দুর্বল হলেই কেবল সৌদি-আমিরাতি যুবরাজ ও শাসকদের এবং একই সাথে ইসরাইলের দৌরাত্ম্য নিরুপদ্রব হয়। ইসরাইলের সাথে মিলে এটাই করতে চেষ্টা করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান এবং মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই