নিজস্ব প্রতিবেদক : একজন উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা উচিৎ, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নয়। কিন্তু এই মুহর্তে আমাদের দেশে নারী তথা নারী উদ্যোক্তা ও নারী পেশাজীবিরা পুরষদের মতো নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ পাননা। এটা সমাজের সমস্যা হোক, দেশের সমস্যা হোক- এটা একটা সমস্যা। নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবেলা করতে হয়না।
তেমন একজন নারী উদ্যোক্তার সফলতার গল্প এটি। তিনি হলেন একজন সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তা, শিল্পী ও স্বনামধন্য লীলাবতী হাউসের স্বত্ত্বাধিকারি রুমানী সুলতানা। তিনি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও তার ব্যাপক পরিচিতি আছে সমাজের অবহেলিত অসহায় বেকার তরুনী, নারীদের মাঝে। সফল নারী উদ্যোক্তা রুমানী সুলতানা জানিয়েছেন, এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও আনন্দ সুখের অনেক কাব্য।
সফল নারী উদ্যোক্তা রুমানী সুলতানা দিনাজপুর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দিনাজপুরের মাটিতে কেটে দেওয়া। এরপর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঢাকার ইডেন কলেজে স্নাতক এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে যোগদান করলেও দীর্ঘ ৫ বছর কর্মরত থাকার পর নানা হিসাব–নিকাশ সেরে ভালো লাগার কাজটিতেই মনোযোগী হয়েছেন রুমানী সুলতানা।
নিজস্ব আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন আস্থা। শুরুটা স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ না হলেও তিন বছরে তাঁর পোশাকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘লীলাবতী হাউস’ পেরিয়েছে অনেক বন্ধুর পথ। শৈশব থেকেই তার ইচ্ছা ছিলো একদিন সফল ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচিতি পাবেন এবং সমাজের অপরাধ, অসংগতিগুলো থেকে মানুষদের সঠিক পথে আনতে সহয়তা করবেন।
স্বনামধন্য লীলাবতী হাউসের স্বত্ত্বাধিকারি রুমানী সুলতানার সবচেয়ে গর্বের বিষয় হলো- তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তার বাবার মত করে দেশকে ভালোবাসতে চান এবং দেশের গরীব-দু:খী মানুষের জন্য কিছু করতে চান।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। সব সময় তারা তাঁর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় আজ তিনি এই জায়গায় আসতে পেরেছেন।
নারী উদ্যোক্তার পাশাপাশি তিনি সমান তালে চালিয়ে নিচ্ছেন সংগীতকেও। ছোটবেলায় চাচা জাহাঙ্গীর হোসাইন লাবুর হাতেই হয় সংগীতাংগনের প্রথম হাতেখড়ি। এরপর স্থানীয় দিনাজপুরের উদীচী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেকে সংগীতাংগনে পাকাপোক্ত করেন। এরপর ঢাকায় এসে ছায়ানটে ভর্তি হয়ে নজরুল এবং ক্লাসিক্যাল গড়নার সংগীতের প্রতি মনোনিবেশ করেন রুমীন সুলতানা। ক্ল্যাশিকাল সংগীত অঙ্গনে নিজেকে জানান দিতে তিনি তামিল নিয়েছেনে সংগীতগুরু উস্তাদ সাইমুদ আলী খানের কাছে। বর্তমানে যার শরনাপন্নে সংগীত চর্চার তালিম নিচ্ছেন তিনি হলেন উস্তাদ রেজওয়ান আলী লাভলু স্যার। এছাড়া তিনি সংগীতজ্ঞে তামিল নিয়েছেন ভারতের কলকাতার পন্ডিত তুষার দত্তের কাছে। বাংলাদেশের আইকন শিল্পীর মধ্যে কনক চাঁপা তার ভীষণ পছন্দের একজন মানুষ। ছোট বেলা থেকে ইচ্ছে তার মত করে নিজেকে গড়ে তোলা এবং গান করা। যদিও উনার মত করে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব না,তবুও হাল ছাড়ার পাত্রীও তিনি নন। এভাবে কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে মেলে ধরনের তার ভক্তদের মাঝে। সংগীতে ভালো অবদানের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পুরষ্কার এসে জমা পড়েছে তার ঝুঁড়িতে।
মন খারাপে রুমীন সুলতানা ছুটে যান ঢাকার আশেপাশে কোন বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে সাধ্যমত সেবা শুশ্রূষা করার চেষ্টা করেন বৃদ্ধ বাবার মধ্যে নিজের বাবার ছায়া ভেবে। অবসরে ভ্রমন-পিপাসু রুমানী সুলতানা পছন্দ করে ভ্রমন করতে, তিনি দেশের বিভিন্ন যায়গায় ভ্রমনের পাশাপাশি ভ্রমন করতে চান পূথিবীর একাধিক দেশ। ভাষাগত দক্ষতা রয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে, অপছন্দের তালিকায় রয়েছে পর-নিন্দাকরা, অহংকার করা, মিথ্যা কথা বলা।
রুমানী মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তাঁর এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যেকোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ- স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। আমি একা বড় হতে চাই না; আশপাশের নারীদেরও সফল দেখতে চাই।
সফল নারী উদ্যোক্তা রুমানী সুলতানা বলেন, জীবনে অনেক পেয়েছি এবার কিছু দিতে চাই আমি সমাজের অবহেলিত মানুষ বিশেষ করে নারীরা যারা আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে অসহায় তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাই, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্বর্নিভরশীল করে গড়ে তুলতে চাই।