জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি (সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ) অবৈধ অভিবাসীদের জন্য তিনমাসের যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে আরব আমিরাত সরকার তার সুযোগ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
সোমবার আমিরাতের অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সরকারি দপ্তর জেনারেল ডিরেক্টরেট অভ রেসিডেন্সি অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাফেয়ার্স বরাত দিয়ে স্থানীয় পত্রিকা খালিজ টাইমস জানায়, ১ অগাস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অবৈধদের ‘স্পন্সর’ খুঁজে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে সরকার।
এর প্রেক্ষিতে ওইদিন বিকালেই আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, “ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই এমন প্রতিটি প্রবাসীকে আমিরাত সরকার এদেশে রাখতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা খোলা এবং আভ্যন্তরীণ ভিসা ট্রান্সফারের সুযোগও আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ”
“এবারের অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমার থিম হলো- আপনার অবস্থান বৈধ করে নিজেকে সুরক্ষা করুন।”
রাষ্ট্রদূত জানান, সাধারণ ক্ষমার আওতায় ১ অগাস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীরা
বিনা জেল-জরিমানা বা নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই আমিরাত ত্যাগ করতে পারবেন। পরে ভিসা চালু হলে আবার আমিরাত ফিরতে পারবেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সাধারণ ক্ষমার আওতায় অক্টোবর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হতে পারবেন। আর তা না পারলেও কাজ খোঁজার জন্য আরও ছয়মাসের ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
তবে কাজ অনুসন্ধানীদের মধ্যে আমিরাতের মিনিস্ট্রি অভ রিসোর্স অ্যান্ড এমিরাইটাইজেশনে নিবন্ধনভুক্তরাই ফাঁকা কর্মসংস্থানে নিয়োগে অগ্রাধিকার পাবেন। কোনও কারণে পরের ছয়মাসেও কাজ না পেলে, অবশ্যই দেশটি ছাড়তে হবে তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে দুবাইয়ের কন্সাল জেনারেল এস বদিরুজ্জামান, আবুধাবী দূতাবাস ও দুবাই কনস্যুলেটের জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা, আবুধাবিতে কর্মরত বাংলাদেশি গণমাধ্যম কর্মীরা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবি, বাংলাদেশ সমিতি, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ স্কুল, বিমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদুত জানান, আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ১০ শতাংশ বা তারও কম সংখ্যক অভিবাসী বৈধভাবে এদেশে এসেও নানা কারণে অবৈধ হয়ে গেছেন। তিনি তাদের বৈধ হওয়ার তাগিদ দেন। কিংবা আমিরাত ছাড়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা চাই না আমাদের একটা লোকও এদেশ থেকে ফিরে যান। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ভিসা ট্রান্সফার ও অন্যান্য ইস্যুতে অন্যান্য দেশের জন্য আমিরাত যেসব সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তার সবগুলো বাংলাদেশিরাও পাবেন।”
সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ বাংলাদেশিদের সুবিধা
> কোম্পানি বা স্পন্সরের সাথে বনিবনা না হওয়ায় পলাতক থাকার কারণে পাসপোর্ট পুলিশের কাছে ‘তামিম’ বা জব্দ থাকলে নির্ধারিত ফি দিয়ে এখন তা তুলে নেয়া যাবে।
> আগে বৈধ হওয়ার জন্য কেবল আরব স্পন্সর লাগতো। এখন তার পাশাপাশি যেকোনও প্রাইভেট কোম্পানির স্পন্সর পেলেও ভিসা পাবেন বাংলাদেশিরা।
> স্পন্সর খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে আরও অনূর্ধ্ব ৬ মাসের ভিসা পাবেন।
> আমিরাত সরকার যেহেতু নমনীয়তা দেখিয়েছেন তাই যাদের পাসপোর্ট নেই তাদেরকে ভিসা লাগানোর জন্য অস্থায়ী হাতে লেখা পাসপোর্ট দেবেন।
> যারা দেশে ফিরে যেতে চান তারা ২০ দিরহাম ফি দিয়ে দূতাবাস থেকে আউটপাস নিয়ে জেল জরিমানা ছাড়াই দেশ ত্যাগ করতে পারবেন। পরে ভিসা খুললে আবার বৈধভাবে আমিরাতে আসতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং দুবাইয়ের কন্সাল জেনারেল এস বদিরুজ্জামান সাধারণ ক্ষমাপ্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কম্যুনিটি ও প্রবাসীদের সহযোগিতা চান।
এর আগে ১৯৯৬, ২০০২, ২০০৭ এবং ২০১৩ সালে আমিরাত সরকার সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৯ লাখেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়েন কিংবা তাদের এদেশে অবস্থান বৈধ করে নেন।