Menu |||

” আমার পিতা মরহুম আব্দুল মোবিন ” ফারহানা মোবিন

১৯৯৭ সালের ৩১ শে মার্চ দুপুর একটার সময় না ফেরার দেশে হারিয়ে গিয়েছিল আমার বাবা। আমার বাবাকে কবর দেয়া হয়েছিল রাজশাহীর টিকাপাড়া কবরস্থানে।

২০১৭ সালে আমি গিয়েছিলাম রাজশাহীতে। আমাদের পি.এন. স্কুল এর প্রথম পুনরমিলনী অনুষঠানে। দীর্ঘ দশ বছর আমি সেই স্কুলে লেখাপড়া করেছি।

দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। স্কুল জীবনের বান্ধবীদের কাছে পেয়ে মনে হচ্ছিল, সেই শৈশবে ফিরে গেছি। অনুষ্ঠানে অনেক পুরানো শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে দেখা হয়েছিল।

ভালো লাগার সে অনুভূতির মাঝে মনটা ছটফট করছিল আমার বাবার কবর টা দেখার জন্য।

অনুষ্ঠান সকাল থেকে শুরু হয়েছিল।

বিকেলের দিকে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার বাবা কে দেখার জন্য। মনে হচ্ছিল করব টা দেখা মানে, আমার বাবা কে দেখা…!!!

আমি বান্ধবীদের কাউকে না জানিয়ে ছুটে গেলাম আমার বাবার কবরস্থানে।

বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।

আমি এতো অপদার্থ সন্তান যে, কবরস্থানে যেয়ে আমার পিতার কবর আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না । দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহীর টিকাপাড়া কবরস্থানে গেলাম ।

চারিদিকে রাস্তাঘাট বাড়ীঘর সব বদলে গেছে । পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন । আমার বুক ফেটে কান্না আসলো । আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম ।

কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আমি একা কবরস্থানে । নিজেকে
আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল । চারিদিকে সব মরা মানুষ গুলো ঘুমিয়ে আছে। অনন্তকালের ঘুম।

পুরো কবরস্থান যেন নতুন হয়ে গেছে।
দেয়াল গুলো নতুন করে রং করা।

আমার কাছে চারিদিকে নতুন মনে হচ্ছিল।

এতো কবরের ভীড়ে আমি কোথায় সেই কবর খুঁজে পাবো ? চোখের পানি আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো । আমি কিছু সময় পাগলের মতো কবর খুঁজতে শুরু করলাম।

আমার বাবা তার করব বাঁধাতে নিষেধ করেছিল। তাই কবরের চারিদিকে কোন দেয়াল ছিল না।

বেচে থাকা অবস্থায় বলতো, ” আমার বুকের উপর কোন একজন মুসলমান ভাই এর কবর হবে। সেই সওয়াব আমি পাবো। ”

কিছুতেই কবর খুঁজে পাওয়া গেল না। মনে হচ্ছিল , আমার পিতা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,
” মা , এতো বছর পরে আমাকে দেখতে আসলা , আমার কবর খুঁজে পাচ্ছো না কেন ??? এই যে আমি তোমার পাশে । ”

হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে , আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম । বুক ভরা হাহাকার আমার চোখের পানি হয়ে ঝরতে শুরু করলো ।

হঠাৎ এক অপরিচিত বৃদ্ধ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন , ” মা তুমি কি এই শহরে নতুন এসেছো ? ”

আমি বললাম , ” দীর্ঘ ছয় বছর পরে এই শহরে
এসেছি । ”

তিনি বললেন , ” মা তাড়াতাড়ি এই কবরস্থান থেকে চলে যাও । আর কিছু সময় পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । নেশাখোর ছেলেদের অনেকেই আশেপাশে থাকে ।
তুমি মেয়ে মানুষ । আর কোনদিন কবরস্থানে একা আসবা না । ”

তিনি চলে গেলেন ।
আমি কবর খুঁজে পেলাম না ।
সব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া করলাম । মন মানছিল না । কাঁদতে কাঁদতে কখন যে সন্ধ্যা হতে শুরু করলো , আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । কবর খুঁজে পেলাম না । পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন ।

চোখের পানি মুছতে মুছতে কবরস্থান থেকে চলে আসলাম । আসার সময় কবরস্থানের কিছু ছবি তুললাম।

মনে হচ্ছিল আমার বাবার ছবি তুলছি। আমার আব্বু ছিল আমার মতো। ছবি তোলার পাগল…!

কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছিল। আবারও বান্ধবীদের কাছে যাবার সময় সানগ্লাস পড়লাম। আমার চোখে পানি দেখলে তারা কষ্ট পাবে তাই।

অনুষ্ঠান চলাকালিন একজন বললো, ” কি রে তুই এই সন্ধ্যার সময় সানগ্লাস পড়েছিস কেন?

এখন তো রোদ নায়। আমি বললাম, অতি আনন্দ তে সন্ধ্যায় সানগ্লাস পড়েছি। আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো…! ”

স্কুল থেকে উপহার পাওয়া ক্রেস্ট টা হাতে নিয়ে আবারও আমার চোখ ভিজে উঠলো। বার বার মনে হলো, ” আমার বাবা আমার কোন অর্জন দেখে যেতে পারলোনা…!!! ”

আমাদের কে ভালো রাখবার জন্য এই মানুষ টা আমাদের জন্য আমৃত্যু দিয়েছিল সীমাহীন বিসর্জন।

জানালা দরজা বিহীন মাটির ঘরে তুমি অনেক ভালো থেকো…!!!

তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে…!!!

কতোদিন তোমার সাথে কথা বলিনি, তোমার হাত ধরে পদ্মা নদীর ধারে হাঁটিনি…!!!

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগীরা।

 

 

ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

” আমার পিতা মরহুম আব্দুল মোবিন ” ফারহানা মোবিন

১৯৯৭ সালের ৩১ শে মার্চ দুপুর একটার সময় না ফেরার দেশে হারিয়ে গিয়েছিল আমার বাবা। আমার বাবাকে কবর দেয়া হয়েছিল রাজশাহীর টিকাপাড়া কবরস্থানে।

২০১৭ সালে আমি গিয়েছিলাম রাজশাহীতে। আমাদের পি.এন. স্কুল এর প্রথম পুনরমিলনী অনুষঠানে। দীর্ঘ দশ বছর আমি সেই স্কুলে লেখাপড়া করেছি।

দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। স্কুল জীবনের বান্ধবীদের কাছে পেয়ে মনে হচ্ছিল, সেই শৈশবে ফিরে গেছি। অনুষ্ঠানে অনেক পুরানো শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে দেখা হয়েছিল।

ভালো লাগার সে অনুভূতির মাঝে মনটা ছটফট করছিল আমার বাবার কবর টা দেখার জন্য।

অনুষ্ঠান সকাল থেকে শুরু হয়েছিল।

বিকেলের দিকে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার বাবা কে দেখার জন্য। মনে হচ্ছিল করব টা দেখা মানে, আমার বাবা কে দেখা…!!!

আমি বান্ধবীদের কাউকে না জানিয়ে ছুটে গেলাম আমার বাবার কবরস্থানে।

বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।

আমি এতো অপদার্থ সন্তান যে, কবরস্থানে যেয়ে আমার পিতার কবর আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না । দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহীর টিকাপাড়া কবরস্থানে গেলাম ।

চারিদিকে রাস্তাঘাট বাড়ীঘর সব বদলে গেছে । পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন । আমার বুক ফেটে কান্না আসলো । আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম ।

কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আমি একা কবরস্থানে । নিজেকে
আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল । চারিদিকে সব মরা মানুষ গুলো ঘুমিয়ে আছে। অনন্তকালের ঘুম।

পুরো কবরস্থান যেন নতুন হয়ে গেছে।
দেয়াল গুলো নতুন করে রং করা।

আমার কাছে চারিদিকে নতুন মনে হচ্ছিল।

এতো কবরের ভীড়ে আমি কোথায় সেই কবর খুঁজে পাবো ? চোখের পানি আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো । আমি কিছু সময় পাগলের মতো কবর খুঁজতে শুরু করলাম।

আমার বাবা তার করব বাঁধাতে নিষেধ করেছিল। তাই কবরের চারিদিকে কোন দেয়াল ছিল না।

বেচে থাকা অবস্থায় বলতো, ” আমার বুকের উপর কোন একজন মুসলমান ভাই এর কবর হবে। সেই সওয়াব আমি পাবো। ”

কিছুতেই কবর খুঁজে পাওয়া গেল না। মনে হচ্ছিল , আমার পিতা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,
” মা , এতো বছর পরে আমাকে দেখতে আসলা , আমার কবর খুঁজে পাচ্ছো না কেন ??? এই যে আমি তোমার পাশে । ”

হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে , আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম । বুক ভরা হাহাকার আমার চোখের পানি হয়ে ঝরতে শুরু করলো ।

হঠাৎ এক অপরিচিত বৃদ্ধ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন , ” মা তুমি কি এই শহরে নতুন এসেছো ? ”

আমি বললাম , ” দীর্ঘ ছয় বছর পরে এই শহরে
এসেছি । ”

তিনি বললেন , ” মা তাড়াতাড়ি এই কবরস্থান থেকে চলে যাও । আর কিছু সময় পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে । নেশাখোর ছেলেদের অনেকেই আশেপাশে থাকে ।
তুমি মেয়ে মানুষ । আর কোনদিন কবরস্থানে একা আসবা না । ”

তিনি চলে গেলেন ।
আমি কবর খুঁজে পেলাম না ।
সব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া করলাম । মন মানছিল না । কাঁদতে কাঁদতে কখন যে সন্ধ্যা হতে শুরু করলো , আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । কবর খুঁজে পেলাম না । পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন ।

চোখের পানি মুছতে মুছতে কবরস্থান থেকে চলে আসলাম । আসার সময় কবরস্থানের কিছু ছবি তুললাম।

মনে হচ্ছিল আমার বাবার ছবি তুলছি। আমার আব্বু ছিল আমার মতো। ছবি তোলার পাগল…!

কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছিল। আবারও বান্ধবীদের কাছে যাবার সময় সানগ্লাস পড়লাম। আমার চোখে পানি দেখলে তারা কষ্ট পাবে তাই।

অনুষ্ঠান চলাকালিন একজন বললো, ” কি রে তুই এই সন্ধ্যার সময় সানগ্লাস পড়েছিস কেন?

এখন তো রোদ নায়। আমি বললাম, অতি আনন্দ তে সন্ধ্যায় সানগ্লাস পড়েছি। আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো…! ”

স্কুল থেকে উপহার পাওয়া ক্রেস্ট টা হাতে নিয়ে আবারও আমার চোখ ভিজে উঠলো। বার বার মনে হলো, ” আমার বাবা আমার কোন অর্জন দেখে যেতে পারলোনা…!!! ”

আমাদের কে ভালো রাখবার জন্য এই মানুষ টা আমাদের জন্য আমৃত্যু দিয়েছিল সীমাহীন বিসর্জন।

জানালা দরজা বিহীন মাটির ঘরে তুমি অনেক ভালো থেকো…!!!

তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে…!!!

কতোদিন তোমার সাথে কথা বলিনি, তোমার হাত ধরে পদ্মা নদীর ধারে হাঁটিনি…!!!

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগীরা।

 

 

ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।