২০১৬ সালের মার্চে ভারতের তামিলনাড়ুতে দলিত সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির খুনের ঘটনায় প্রচণ্ড ধাক্কাই খেয়েছিলো ভারত।
কারণ প্রকাশ্য দিবালোকে ২২ বছর বয়সী শংকর ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছিলো একটি মাত্র অভিযোগে- আর সেটি হলো তিনি উচ্চবর্ণের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন।
শংকরকে যখন খুন করা হয় তখন সাথেই ছিলেন স্ত্রী কৌসালিয়া।
পরে আদালতে নিজের পিতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তিনি এবং এখন চান এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় শাস্তি হোক তার মায়েরও।
নিজেদের আট মাসের বিবাহিত জীবনের শেষ দিনটিতে গ্রামের বাড়িতে সকাল নটার দিকে ঘুম থেকে জেগেছিলেন কৌসালিয়া।
পরে স্বামীর সাথে একটি বাসে করে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরের একটি বাজারে যান তিনি।
পরদিন স্বামী শংকরের কলেজে একটি অনুষ্ঠান আছে, তাই তার জন্য একটি শার্ট কেনার জন্যই ওই বাজারে যান তারা।
এক পর্যায়ে গোলাপি রংয়ের একটি শার্ট কিনে এনে তা আবার বদলিয়ে একটি সবুজ রংয়ের শার্ট আনার জন্য আবার বাজারটিতে ঢুকেন তারা।
শার্ট নিয়ে ব্যস্ত সড়ক পার হয়ে বাসস্টপের দিকে যাচ্ছিলেন দুজনে।
কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার আগেই দুটি মটর সাইকেলে পাঁচজন পেছন থেকে এসে তাদের পথ আটকায়। এরপর বড় ছুড়ি নিয়ে হামলে পড়ে। আর পুরো দৃশ্যটিই ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়।
আর পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র ৩৬ সেকেন্ডের মধ্যে।
পরে তাদের দুজনকেই হাসপাতালে নেয়া হলেও পুরো শরীরে ৩৪টি ছুড়ির আঘাত পাওয়া শংকরের আর সুস্থ হয়ে ফেরা হয়নি।
আর ৩৬টি সেলাই নিয়ে বিশ দিন হাসপাতালে ছিলেন কৌসালিয়া।
তার মনে পড়ে আঘাতের সময় হামলাকারী বারবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো কেন নিম্নবর্ণের একজনকে ভালবাসতে গেলো সে।
শংকর ছিলো একজন দলিত এবং দিনমজুরের সন্তান। আর কৌসালিয়া প্রভাবশালী থেভার গোত্রের। পালানি শহরে তাদের দোতলা বাড়ি।
তবে পারিবারিক অনেক বিধিনিষেধ এর জন্য অনেক কিছুই করা হয়নি তার। কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে কোন বাধাই মানেননি তিনি।
শংকরের সাথে তার পরিচয় হয়েছিলো কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে।
দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় তার মনজয় করেছিলো শংকর। কিন্তু এরপর থেকে শংকরের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাকে।
এক পর্যায়ে ২০৫ সালের ১২ই জুলাই মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। এরপর তারা পুলিশের কাছে গিয়ে জানান ও দু বর্ণের বিয়ের কারণে সুরক্ষাও চান।
কৌসালিয়ার মতে, ‘এরপরের আটটি মাসই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের”।
তার বাবা মা এসে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজী হননি কৌসালিয়া।
ক্ষুব্ধ বাবা শাসিয়ে গেছে যে, “তোমার কিছু ঘটলে আমরা দায়ী হবোনা”।
পরে পুলিশী তদন্ত দেখা গেছে তার বাবাই হামলাকারীদের ভাড়া করেছিলেন। মাত্র ৫০ হাজার টাকায় মেয়ে ও জামাইকে খুন করাতে চেয়েছিলেন তিনি।
কৌসালিয়া আদালতে ৫৮ বার তার বাবা-মাকে জামিন দেয়ার বিরোধিতা করেছেন।
এরপর গত ডিসেম্বরে আদালত কৌসালিয়ার বাবাসহ পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড দেয়, তবে খালাস পান তার মা। যদিও তার দাবি তার মাও সমান অপরাধী।
সূত্র, বিবিসি