আফগানিস্তানে চলতি মাসের সংসদ নির্বাচনের ওপর একটি রিপোর্ট প্রচার করেছিলো একটি টেলিভিশন চ্যানেল, যার বিষয়বস্তু ছিলো নারী প্রার্থীরা। কিন্তু ওই প্রতিবেদনের নারী প্রার্থীদের যোগ্যতা অযোগ্যতার চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে নারীদের সাজসজ্জা বা মেকআপ।
প্রতিবেদক এখানে তুলে ধরেছেন নারী প্রার্থীদের ভারী সাজসজ্জার বিষয়টি। আর ভিডিওতে দেখানো হচ্ছিলো নেইলপলিশ দেয়া আঙ্গুল, লিপস্টিক দেয়া ঠোঁট কিংবা কাজল দেয়া চোখ। সাথে অনেকটা ব্যাঙ্গ করেই বলা হচ্ছিলো যে এরা জনসেবার শ্লোগান দিচ্ছে।
গত বিশে অক্টোবর হয়ে যাওয়া নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিভিশন চ্যানেলটি তাদের প্রতিবেদনে মূলত গুরুত্ব দিয়েছে নারী প্রার্থীদের এসব বিষয়গুলো।
অর্থাৎ কে কেমন সাজসজ্জা করে ছবি তুলেছে কিংবা ভোট চেয়ে পোস্টার বানিয়েছে।
যেসব পোস্টারে নারী প্রার্থীরা জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটিতে অনেকেই মনে করেন রাজনীতির মতো জায়গায় এসব মেকআপ বা সাজসজ্জাকে গুরুত্ব না দেয়াই ভালো।
যেমনটি বলছিলেন হেরাত কাউন্সিলের সদস্য সাকিনা হুসেইন।
“নির্বাচনী প্রচারণা সেই জায়গা নয়, যেখানে একজন নারী মেক আপ নিয়ে আসতে পারেন। কারণ এগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে”।
হেরাত কাউন্সিলের এই সদস্য ওই টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন মেকআপ দেয়া বা ফটোশপ করে চেহারা সুন্দর করার বিষয়টি ভোটারদের সাথে এক ধরণের প্রতারণা।
তবে এ প্রতিবেদনে কোনো নারী প্রার্থীর সাথে কথা বলা হয়নি।
পরে বিবিসি কথা বলে নাহিদ ফরিদ নামের একজন রাজনীতিকের সাথে যার নাম টেলিভিশনের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো।
“আমি একজন নারী এবং আমি বিশ্বাস করি আমাকেই আমার যোগ্যতা বা সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। আর সেটি করতে হবে আমার অর্জন এবং আমার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই, মেকআপ দিয়ে নয়।”
তিনি বলছিলেন, ” আবার এটি বড় কোনো ইস্যু হওয়া উচিত নয়। আসলে এটি নিতান্তই একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার যে কখনো কখনো আপনি নারী সাজতে চান”।
তুলনামূলক ভাবে হেরাত আফগানিস্তানের অন্য এলাকাগুলোর চেয়ে কিছুটা উদার হিসেবে পরিচিত। দেশটির অন্য প্রদেশের চেয়ে এখানকার মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার প্রবণতাও বেশি।
নাহিদ ফরিদ মনে করেন এসব কারণে এখনকার পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে একদিন।
“আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি যেদিন লোকে আমাদের বিবেচনা করবে আমাদের যোগ্যতা দেখে, আমি নারী নাকি পুরুষ তার ভিত্তিতে নয়। কিন্তু নারী ও পুরুষ একযোগে কাজ না করলে সেই দিনটি আনা সম্ভব হবেনা। আমি মনে করি এ লড়াইয়ে পুরুষদেরও নারীর পাশে দাঁড়ানো উচিত”।
এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিলো চারশোর মতো। এর মধ্যে হেরাত থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন আঠাশ জনের মতো। হেরাত দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ।
“আমার মনে হয় আমাদের কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক। যেমন ধরুন কথা বলা বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।”
“আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেমন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কিন্তু কেউ এগুলোর অপব্যবহার করলে সেটি গণতন্ত্রকেই ক্ষতি করবে। আমাদের আচরণেই পরিবর্তন আনতে হবে কিন্তু সেটি মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে নয়। কারণ তাহলে এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে”।
এভাবেই একদিন নারীদের জন্য দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন আরও বেশি সুখকর হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তিনি যেখানে যোগ্যতাই হবে মূল্যায়নের মাপকাঠি।
সূত্র, বিবিসি